নদিয়া জেলা শুধু বৈষ্ণব সাধনারই তীর্থভূমি নয়। এই জেলার শাক্ত সাধনারও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যে সাধনায় এক উজ্জ্বল নাম রানাঘাট। এখানে রয়েছে অতি প্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। যে মন্দির শুধু আর্তজনের আশ্রয়স্থলই নয়। মনস্কামনা পূরণের তীর্থ বলেও ভক্তদের বিশ্বাস। কথিত আছে, এই কালী মন্দিরে পুজোর শুরুটা হয়েছিল ডাকাতদের হাত ধরে।
সেই সময় রানাঘাটের নাম ছিল ব্রহ্মডাঙা। আর তা ছিল গভীর জঙ্গল। যার লাগোয়া ছিল চূর্ণী নদী। আর, সেই জঙ্গলেই দলবল নিয়ে থাকত রনা ডাকাত। তার আরাধ্য ছিল দেবী সিদ্ধেশ্বরী। আজ যেখানে এই মন্দির, সেখানেই রনা দলবল নিয়ে দেবীর পূজা করত। জমিদার আর ব্যবসায়ীদের অর্থ, সামগ্রী লুঠ করে তা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিত।
কথিত আছে মাতৃভক্ত রনা কালী সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিল। সেই থেকেই তার আরাধ্য দেবীর নাম হয়েছে সিদ্ধেশ্বরী। চূর্ণী নদীর ধারেই ছিল দেবীর মন্দির। আর, রনা ডাকাত দেবীর পুজো করে দিনের বেলাতেই ডাকাতি করার জন্য মন্দিরের পাশে চূর্ণী নদীর ঘাট ব্যবহার করত। সেই থেকে এই জায়গার নাম হয় রনাঘাট। পরবর্তীতে যা অপভ্রংশে পরিচিত হয় রানাঘাট নামে।
আরও পড়ুন- সিদ্ধিদাত্রী আর মনস্কামনা পূরণকারী, অসংখ্য ভক্তের আশ্রয় গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির
আগে এই মন্দিরে পাঁঠা বলি হত। এখন আর হয় না। এই মন্দিরের পূজারিরা বংশপরম্পরায় এখানে পুজো করে আসছেন। রনা ডাকাতের পুজোর পঞ্চমুণ্ডি আসন আজও ব্যবহার করে আসছেন মন্দিরের পূজারি। খুবই জাগ্রত এবং শান্ত বলে ভক্তদের কাছে পরিচিত দেবী সিদ্ধেশ্বরী। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ভক্তরা আসেন। অনেকেই মানত করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে, তাঁরা এসে দেবীকে পুজো দিয়ে যান।
এখানে দেবী মূর্তি আয়তনয়না, ভয়ংকরী আবার করুণাময়ীও। সারা বছরই চলে নিত্যপুজো। মূর্তি বলতে কষ্টিপাথরের কালী বিগ্রহ। উচ্চতা তিন ফুট। তাঁর নীচে শায়িত শিবমূর্তি শ্বেতপাথরের তৈরি। পাশের ছোট মন্দিরে মহাদেব প্রতিষ্ঠিত। ভক্তদের অর্থসাহায্যে নাটমন্দিরও তৈরি হয়েছে। সঙ্গে, রাজ্য সরকারও অর্থসাহায্য করে। মাঘ সংক্রান্তিতে এখানে বিশেষ পূজার আয়োজন হয়। সেই দিন নানা অনুষ্ঠান, যজ্ঞ, অন্নসেবা, আরতির মধ্যে দিয়ে চলে সিদ্ধেশ্বরীর আরাধনা।