অমাবস্যার সময়কাল-
আজ কৌশিকী অমাবস্যা। ভাদ্রমাসের এই অমাবস্যাকে অনেকে কৌষিকী, অনেকে কৌষি, অনেকে আবার আলোকামাবস্যা বলে থাকেন। কোনও পঞ্জিকামতে ভোর ৪টা ৩২, আবার কোনও পঞ্জিকা অনুযায়ী ভোর ৫টা ৩১-এ কৌশিকী অমাবস্যা শুরু হয়েছে। থাকবে শুক্রবার সকাল ৬টা ৩০ পর্যন্ত।
কৌশিকী অমাবস্যার গুরুত্ব-
হিন্দু এবং বৌদ্ধ, দুই সাধনাতেই কৌশিকী অমাবস্যার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তন্ত্রমত অনুযায়ী, এই রাতকে 'তারা রাত' বলে। সাধককুলে প্রচলিত যে এই রাতেই নাকি বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরকের দরজা মুহূর্তের জন্য খুলে যায়। সাধক চাইলে সেই সময়ের সুযোগ নিয়ে দৈব বা আসুরিক- দুই সাধনার যে কোনওটিতে সিদ্ধিলাভ করতে পারেন। তন্ত্রমতে, এই তিথিতে সাধনায় কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করা যায়।
কেন অমাবস্যার নাম কৌশিকী-
পুরাণমতে, দৈত্য শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠোর সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে বরলাভ করেছিলেন। তাঁদের বর দেওয়া হয়েছিল যে কোনও পুরুষ বধ করতে পারবেন না। শুধু অযোনি-সম্ভূত বা মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেননি, এমন নারীই পারবেন বধ করতে। এদিকে দেবী সতী দক্ষের যজ্ঞস্থলে দেহত্যাগ করেছিলেন। তাই কালিকা জন্মে দেবীর গায়ের রং ছিল মেঘের মত কালো। শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধের জন্য দেবীকে মহাদেব কালিকা নামে ডাকায় দেবী ক্ষুব্ধ হন। মানস সরোবরের ধারে শুরু করেন কঠিন তপস্যা। সেই তপস্যায় দেবীর গায়ের রং বদলে হয় পূর্ণিমার চাঁদের মত। আর, তাঁর কালো কোষ থেকে জন্ম নেয় অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণা দেবী। কোষ থেকে জন্ম বলে দেবীর নাম কৌষিকী বা কৌশিকী। এই দেবী ভাদ্রমাসের অমবস্যা তিথিতে শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন। তাই এই অমাবস্যা তিথির নাম কৌশিকী অমাবস্যা।
তারাপীঠের সঙ্গে কৌশিকী অমাবস্যার সম্পর্ক-
কথিত আছে, কৌশিকী অমাবস্যাতেই তন্ত্রসাধক বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ওরফে বামাক্ষ্যাপা দেবী তারার সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তিনি তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূলতলায় সাধনা করেছিলেন। ভক্তদের একাংশ দাবি করেন এই পীঠে সতীর তৃতীয় নয়ন বা নয়নতারা পড়েছিল। তাই এর নাম তারাপীঠ। যদিও অধিকাংশ মত অনুযায়ী, তারাপীঠ আসলে সিদ্ধপীঠ, কোনও সতীপীঠ নয়। সাধকদের বিশ্বাস, কৌশিকী অমাবস্যায় এখানে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ ও সিদ্ধি লাভ করে থাকেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত মৌলীক্ষা মন্দির! ভক্তদের দাবি, পূরণ হয় মনস্কামনা, ঘটে বহু অলৌকিক ঘটনাও
রেলের তরফে ব্যবস্থা-
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে হাওড়া এবং রামপুরহাটের মধ্যে বেশ কিছু স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।
তিন দিনের জন্য এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীরা যার সুবিধা পাবেন। শনিবার পর্যন্ত চালু থাকা এই স্পেশাল ট্রেনগুলোর বেশি স্টপেজ থাকবে না। হাওড়ার পরে থামবে শেওড়াফুলি। তারপর ব্যান্ডেল, বর্ধমান, গুসকরা, বোলপুর, সাঁইথিয়া হয়ে রামপুরহাটে গিয়ে শেষ হবে যাত্রা।
তারাপীঠে বিশেষ ব্যবস্থা-
প্রতিবছরের মত এবারও কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে। এই কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে চিলার মাঠে। চিলার মাঠ ভরে গেলে মনসুবা মোড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যানজট সামাল দিতে রাস্তা ওয়ান ওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।