বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে পালিত হবে ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস। আবার একই দিনে পড়েছে রাখি পূর্ণিমা। এই দুয়ের মধ্যে আপাত ভাবে কোনও মিল না থাকলেও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আড়ালে থাকা দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে রাখি বন্ধনের এক গভীর যোগ রয়েছে। ফিরে দেখা যাক সেই-ই ইতিহাস।
সে এক উত্তাল সময়। ১৯০৫-এর ১৯ জুলাই। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করলেন। অবিভক্ত বাংলাকে শোষণ করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ক্রমশ। তাই প্রশাসনিক কারণে ইংরেজ শাসকরা ঠিক করলেন, ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা হবে বাংলাকে। হিন্দু জনসংখ্যার আধিক্যযুক্ত অঞ্চল আলাদা করা হবে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলা থেকে। বাংলার মুসলিমদের এমন মগজ ধোলাই ততক্ষণে হয়ে গেছে, তাঁরা প্রায় খুশি মনেই মেনে নিয়েছেন প্রস্তাব।
Happy Independence day 2019: ১৫ অগাস্টের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা
তখনকার অবিভক্ত বাংলা মানে কিন্তু বাংলা, বিহার, আসাম, শ্রীহট্ট সবটা মিলে। তত দিনে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে বাংলা। ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে ভাগ করে দিয়ে বিদ্রোহের গতি কমিয়ে আনা। অতএব পাশ হয়ে গেল বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব। তখন শ্রাবণ মাস। ১৬ আগস্ট। কাকতালীয় ভাবে সেটা ছিল রাখি পূর্ণিমা। হিন্দু ঘরের মেয়েরা তাদের ভাই-এর হাতে পরাবে রাখি। অন্যরকম রাখি বন্ধনের কথা মাথায় এল রবীন্দ্রনাথের। ভাই-বোনের নয়, রাখিবন্ধন হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি উৎসব। এ ধর্মের মানুষ ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে হাতে রাখি পরিয়ে দিচ্ছে যার হাতে, তার ধর্ম আলাদা। হাতে হাত রেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হল প্রতীকী প্রতিবাদ। একটা মানুষের ডাকে ধর্ম নির্বিশেষে সারা বাংলা এক হয়েছিল সে দিন। প্রতিবাদের ভাষা, চরিত্র বদলেছে ক্রমশ। দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯১১ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ রদ করে দেন বাংলা ভাগের প্রস্তাব।
রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা পাঠান আপনার প্রিয়জনদের
রাত পোহালেই ১৫ অগাস্ট। দু'শো বছরের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ভারতের স্বাধীন হয়ে ওঠার দিন। এবার আবার সেই দিনেই পড়েছে রাখি পূর্ণিমা। দোকান-বাজার ছেয়ে গিয়েছে তেরঙ্গা পতাকা আর রংবেরঙের রাখিতে। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আড়ালে ঢেকে যাবে ২০১৯ এর লজ্জাগুলো, ধর্মের নামে দেওয়াল গড়ে তোলার গল্পগুলো। দামী ও রঙিন রাখির নিচে ঢাকা পড়ে থাকা সুতোর মতোই, ক্রমশ আমরা হারিয়ে ফেলছি বন্ধনের ধারণা। যে বন্ধন সৌহার্দ্যের। যেখানে স্বাধীনতার মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়।