Advertisment

সুন্দরী সিতংয়ে একান্তে

রবীন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক বাড়িটি কালের নিয়মে নীল-সাদা হয়ে গেলেও, অর্থাভাবে বিদ্যুৎসংযোগবিহীন, ছাদ থেকে জল পড়ে মেঝে ভেসে যায়। বাগানে চিন্তামণি করের বিমূর্ত রবীন্দ্রভাস্কর্যটির ফলকে প্রকট বানানভুল দেখে মন ছেয়ে গেল কুয়াশায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- লেখক

চারদিন দল বেঁধে কজনে মিলে। কলকাতা থেকে সাতজন, সিতংয়ে যুক্ত এক। চুরাশির সুনন্দা ঘোষ ঠিক সুচিত্রা মিত্রর মতো শ্বেতকেশ, বেথুন কলেজের প্রাক্তন-অধ্যক্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গী কুমকুম চট্টোপাধ্যায় বেথুনে সুনন্দার ছাত্রী, পরে সহকর্মী, অবসৃত। ক্রমশ জানা যাবে, তিনি রবীন্দ্রগায়িকাও। আছেন পঁচাত্তরের অঞ্জলি ঘোষাল, প্রাক্তন শিক্ষক, গান জানেন। ষাটের কমল নারসারিয়া আইনজীবী, হিসাবরক্ষক, রবীন্দ্রভক্ত। বন্ধু ও প্রাক্তন-সহকর্মী শমিত সান্যাল ‘অন্যভাষ’ নামে চমৎকার কাগজ করেন। তাঁর সহযোগী আটত্রিশের অভীক গুপ্ত বাগবাজারের হিরো, সুরঙিন অতীত-বর্তমান। কবীর সুমন অঞ্জন দত্ত নচিকেতার চেলা, ইভেন্ট-সংগঠক, ডুয়ার্সের ভ্রমণপরিচালক। আর ঊর্মিলা ও আমি, পরিচয়হীন। গাড়ি পাহাড়ে উঠতেই পৃথিবী বান্ধবহীন, বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা।

Advertisment

উত্তরবঙ্গের জঙ্গল ও পাহাড় হাতের তালুর মতো চেনেন অভীক। সিতংয়ে পৌঁছে আমরা তাঁর অধীনস্থ। দার্জিলিংমেলে এনজিপি-তে নেমে আমরা বাইচুং-সদৃশ যে-তরুণের গাড়ির সওয়ারি, তার নাম আসিফ। নেপালিযুবার আরবিনাম কেন, তা সে নিজেই জানে না। বয়স বলল, বাইশ। কুমকুম বললেন, ‘ওর বয়স কুড়ির বেশি হবেই না।’ সিতংয়ের ‘বিশেষ হোম-স্টে’ থেকে এসেছে সে। ওই গৃহাবাসেই থাকব আমরা। সেবক রোড পেরিয়ে গাড়ি চলল রিয়াংনদীকে পাশে নিয়ে কার্শিয়াংয়ের দিকে। দূরে পাহাড়ের কোল দিয়ে নেমে আসছে উপলব্যথিত নদী। ওই যাত্রাপথের অরণ্য ও পাহাড়ই ভ্রমণের প্রথম দ্রষ্টব্য। চোখ ও মন জুড়োতে-জুড়োতে বেলা বারোটার মধ্যে সিতং।

publive-image ছবি- লেখক

দার্জিলিং-হিমালয়ের খাঁজে অন্যতম কুমারীগ্রাম সিতং। কার্শিয়ং মহকুমার অন্তর্গত। গাড়িতে শিলিগুড়ি, সেবক, কালিঝোড়া, লাটাপাংচার হয়ে মাত্রই ৫৫ কিমি। সিতং সাধারণভাবে ‘কমলালেবুর গ্রাম’ নামে পরিচিত। প্রতিটি বাড়িতেই কমলার গাছ, ফুলের বাগান। সবে ফল ধরেছে কমলাগাছে। চারদিকে ছড়িয়ে কমলাবৃক্ষ, এলাচবন, ফুলঝাড়ুগাছ। জানুয়ারিতে কমলা পাকলে চারদিক ভরে যাবে বর্ণময় পাখির উদ্ভাসে। চারদিক শ্যামলে শ্যামল, নীলিমায় নীল। সে-ভাবে তেমন-কোনও প্রথাগত সাইট-সিয়িং নেই এখানে। ছবির মতো গ্রামটিই দু-চোখ ভরে দেখার। ইস্কুলফেরত লেপচাশিশুরা চোখ কুঁচকে আপনার উদ্দেশে হাত নাড়াবে, আপনি প্রত্যুত্তর করলে তাদের চোখে খুশি ঝলকে উঠবে চাঁদের আলোর মতো।

আরও পড়ুন, পায়ে হেঁটে, ইচ্ছে মত নর্মদা (দ্বাদশ চরণ)

publive-image ছবি- লেখক

সিতংয়ে নেই ডিজে-বাজা কর্কশ হোটেল। আছে হোম-স্টে। নিজেদের বাড়িতেই অতিথি-আপ্যায়ন। প্রথম দিন উঠেছিলাম শেলপু-র ‘আহাল হোম-স্টে’তে। প্রতীকা রাইগুরুং ও কর্ণ গুরুং স্বামী-স্ত্রী মিলে চালান গৃহাবাসটি। তাঁদের আতিথেয়তার কোনও তুলনা নেই। প্রতীকার বোন সদাহাস্য তরুণী মোনা ভারি মিষ্টি দেখতে। সুসজ্জিতা মেয়েটি সিঁড়ি ভেঙে ঘরে-ঘরে চা ও গরমজল দিয়ে যায়। বাবুয়ানিতে লজ্জাই করে। ওর তো এখন কলেজে যাওয়ার কথা। প্রতীকা বললেন, ‘পড়ে কী হবে! চাকরি পেলেও পাবে তো সেই পাঁচ-সাত হাজারের চাকরি। নিজেদের ঘরে কাজ করে তার চেয়ে বেশি পায়।’ বেড়াতে এসে এসব অপ্রিয়-কথা না-তোলাই ভাল। কিন্তু, ওই, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে।

publive-image ছবি- লেখক

ব্যালকনিতে দাঁড়ালে টের পাওয়া যায়, দূরের পাহাড় ডিঙিয়ে মেঘ ঢুকে পড়ে ঘরে। কুয়াশা ঢেকে দেয় দিকচক্রবাল। মুহুর্মুহু পালটে যায় দূরবর্তী পাহাড়শ্রেণি। মনে হয়, এই বারান্দায় বসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় বাকি-জীবন। বৃষ্টি ও কুয়াশা না-থাকলে এই বারান্দা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু,  আমাদের বিধি বাম। মেঘে ও কুয়াশায় ঢেকে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। গ্রামে আছে একটি শতবর্ষের গির্জা। আদিতে ছিল বাঁশের। এখন ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের। অদূরে একটি বৌদ্ধমন্দির। দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাহাড়ে-পাহাড়ে কংক্রিটের ভার  বেড়ে চলেছে দার্জিলিঙেও। উত্তরাঞ্চলের প্লাবন, নেপালের ভূকম্প থেকে কোনও শিক্ষাই নিইনি আমরা। পাহাড় কেটে, কংক্রিটের ভার চাপিয়ে উত্তরোত্তর কোন ধ্বংসের দিকে চলেছি আমরা, ঈশ্বর জানেন।

পরদিন সকালে উঠে গেলাম আরও উপরে। দ্বিতীয় আবাস ‘বিশেষ হোম-স্টে’। কর্ণধার  বিক্রম রাই ২০০৪ সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েতপ্রধান ছিলেন, রাজমিস্ত্রি ও ছুতোরের কাজ করতেন। ২০১৪ থেকে নিজের বাড়িটিকে হোম-স্টে করেছেন। বাড়িটির বাহির ও ভিতরসজ্জায় বোঝা যায় তাঁর রুচির সমগ্রতা। গোটা বাড়িটি ছেয়ে আছে ফুলের টবে। পরে দেখব, গ্রামের সব বাড়িই অনুরূপ। দীনদরিদ্রের বাড়িতেও ফুলের বিচ্ছুরণ বোঝায় লেপচাদের জীবনবোধ।

publive-image ছবি- লেখক

অন্ধকার যা, তা রাজনীতির। পাহাড়ের বাঁকে এক চায়ের দোকানে ছেলেদের জটলা। হাতে কাজ নেই কারও। কিন্তু, সকলের চুলে রংবাহার, সঙ্গে মোটরবাইক। এক বৃদ্ধ জনান্তিকে বললেন, ‘পাহাড়ের শ্রমমুখী ছেলেরা ক্রমশ শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে। তাদের হাতে আসছে রাজনীতির রহস্যময় টাকা। ২০০৪ সালের পরে আর পঞ্চায়েতভোট হয়নি পাহাড়ে। সিপিয়েম তো কবেই পাহাড়ছাড়া হয়েছিল। তারপরেও কেটে যাচ্ছে পরিবর্তনের সাত-বছর। পর্যটনের জন্য কোনও বিশেষ সরকারি ব্যয়বরাদ্দ নেই। জিটিএ কী করে, কে জানে।’ বৃদ্ধের স্বরে হতাশা। শুনে মনে হয়, হিমালয় মানে যে কেবল দার্জিলিং নয়, তা এখনও বুঝে ওঠেনি কেউ। না সরকার, না পর্যটকররা। ফলে, সবরকম  চাপে দার্জিলিং এখন গৌরবহারা। দূষণ বাড়ছে, বাড়ছে জনসংখ্যা। সেখানে আজকাল নাকি এসি চালাতে হয়। জলকষ্ট তো কবে থেকে। অথচ, সামান্য অনুপ্রেরণা পেলে সামগ্রিকভাবে পাহাড় সত্যিই হাসত। নবাবিষ্কৃত কেন্দ্রগুলির প্রচার ও প্রসার হলে স্থানীয় জনজীবনে জোয়ার আসত। তারা কলকাতায় সোয়েটার বেচতে যেত না। ভেবে মনখারাপ লাগে। মনে পড়ে, রাজ্যে দু-জন কৃতবিদ্য পর্যটনমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁদের একজন আবার  উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক দায়িত্বপ্রাপ্তও। বামফ্রন্টের অশোক ভট্টাচার্য তো ছিলেন কার্যত উত্তরবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই। উত্তরবঙ্গ মানে যে কেবল বাঙালি বা কামতাপুরি বা রাজবংশী নয়, গোর্খা নেপালি ভুটিয়া লেপচাও, তা এখনও প্রতীয়মান নয় রাজনীতিতে।কেবল তো মানুষের নয়, অসময় উত্তরবঙ্গের অভয়ারণ্যেরও। চিরকাল ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর প্রাণীদের প্রজনন-মরসুমে জঙ্গল বন্ধ থাকত। বছর-চারেক আগে পুজো পড়েছিল সেপ্টেম্বরে। তখন ডুয়ার্সের হোটেল ও পর্যটনব্যবসায়ীদের দাবিতে জঙ্গল অবারিত করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর। এখনও তেমনই চলছে। মামাটিমানুষের প্রেরণায় বন্যপ্রাণীরাও নিশ্চয়ই সংকুচিত করে নিয়েছে তাদের প্রজননকাল।

publive-image ছবি- লেখক

এইসব ভাবনার মেঘ মনে নিয়েই পরদিন যাওয়া হল অদূরবর্তী তিনচুলে ও লামাহাটার দিকে। পথে পড়ে নামথিং পোখরি (হ্রদ)। এখানে আছে জলগিরগিটির লুপ্তপ্রায় প্রজাতি সালামান্দার। সেই সরীসৃপটি মোটেই সুদর্শনা নয়। তবু, পর্যটকরা জলে পাথর ছুড়ে সালামান্দারের রূপ দেখতে অধীর। স্থানীয় অধিবাসীরা আর কত বাধা দেবে বাবুদের। পাহাড়ের খাঁজে স্বতঃস্ফূর্ত ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকার বাহার দেখে ঈর্ষা হয়। আবহাওয়া অনুকূল হলে তিনচুলে-লামাহাটা থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু, পথেই বিপত্তি। বিপজ্জনকভাবে ধসের রাস্তায় ফেঁসে গেল গাড়ি। ডানদিকে খাদের কিনার। স্থানীয় পথচারীরাই সহজাতভাবে হাত লাগালেন গাড়ি-উদ্ধারে। পাহাড়ে ক্যান্টনমেন্টবিহীন সব রাস্তাই এমনধারা, বিপজ্জনক। চালক ঝুঁকি নেবে না। পাহাড়ে ঝুঁকি নেওয়া মোটেই সঠিক কাজ নয়। ফিরতেও হবে এই পথে। সন্ধ্যে হয়ে যাবে তখন। চালকের কথা শুনে চলাই শ্রেয়। কেননা, পাহাড়ি মানুষ কোনওভাবেই ঠগ নয়। ফিরে এলাম রিয়াংনদীর সেতুর কাছে। পাশে পুরনো কাঠের সেতুটি পরিত্যক্ত হলেও অক্ষত এখনও। পাশে তৈরি হয়েছে চমৎকার ইস্পাতের সেতু। সেখানেই কেটে গেল বিকেল পাশের চায়ের দোকানে বসে নদীর পাথরভাঙা ঢেউ গুনে। যেন, এই সেই জনস্থানমধ্যবর্তী প্রস্রবণগিরি। যার শিখরদেশ সতত সঞ্চরমাণ।

গ্রামের বৌদ্ধমন্দিরটি গত-বর্ষায় ভেঙে গিয়েছিল। সরকারি সাহায্য ছাড়াই ফের বানিয়েছে গ্রামের মানুষ। সরকারি পুজোচাঁদার ভাগ পায় না বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান-সংখ্যালঘুরা। মনে হয়, পাহাড়ের মানুষ আত্মশক্তি ছাড়া অন্য-খয়রাতিতে বিশ্বাসীও নয়। কোনও অভিযোগ নেই বৌদ্ধ-শ্রমণের। আবার বাঁক ঘুরে-ঘুরে উচ্চতম ভিউ-পয়েন্টে। সেখান থেকে দূরের পাহাড়বিন্যাসে মনে হয়, শুয়ে আছেন জীবনাধিক প্রকাণ্ড রবীন্দ্রনাথ। কুয়াশা ঢেকে দিচ্ছে তাঁকে পরম-বিশ্রামে। হয়তো তা আমার অতিকল্পনা। বৌদ্ধমন্দিরের বিষাদের পরে প্রচ্ছন্ন- জীবনদেবতাকে দেখে মন জুড়িয়ে গেল ।

সিতং থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে মংপুতে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি। যাওয়ার আগে আরেকবার পড়ে নেওয়া যায় মৈত্রেয়ী দেবীর ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ নামে আশ্চর্য বইটি। মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামী মনমোহন সেন তখন ছিলেন স্থানীয় সিনকোনা-প্রকল্পের অধিকর্তা। ম্যালেরিয়াপ্রতিরোধী সিনকোনা-ভেষজ নিয়ে তিনি তখন গবেষণায় ব্যাপৃত। কারখানাটি এখনও আছে। মৈত্রেয়ী-মনমোহনের আগ্রহেই ১৯৩৮-১৯৪০ সালে চারবার ওই বাড়িতে কবির অধিষ্ঠান। কালিম্পংয়ের একটি বাড়িতেও কিছুদিন ছিলেন তিনি। আসতেন ডোলিতে চেপে। গোর্খাল্যান্ড-আন্দোলনে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে আবার পুরনো গঠনশৈলীতেই তা নবনির্মিত হয়।

পরদিন মংপুতে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির প্রাঙ্গণে বসে কুমকুম গাইলেন, ‘নাই বা ডাকো রইব তোমার দ্বারে’। আহা। মনে পড়ছিল ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিটি। বাড়িটির গাইড প্রবল-উৎসাহী শিশির রাউত সব দেখালেন ঘুরে। গাইলেন তিনিও। খাসা গলা। ঐতিহাসিক বাড়িটি কালের নিয়মে নীল-সাদা হয়ে গেলেও, অর্থাভাবে বিদ্যুৎসংযোগবিহীন, ছাদ থেকে জল পড়ে মেঝে ভেসে যায়। বাগানে চিন্তামণি করের বিমূর্ত রবীন্দ্রভাস্কর্যটির ফলকে প্রকট বানানভুল দেখে মন ছেয়ে গেল কুয়াশায়। ভাবি, তথ্যসংস্কৃতির ভারপ্রাপ্ত আমলারা কত বেতন পান! মূর্তিবেদিতে স্বভাবতই মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর নাম আছে, ভাস্করের নয়। চতুর্থবর্গের সরকারি কর্মী শিশির বললেন, ‘আপনাদের মতো পাগলেরা মাঝেমধ্যে আসেন এখানে। কবিকে নিয়ে দুটো-কথা বলি, আমার তাতেই আনন্দ।’ কবির লেখার টেবিল, স্নানঘর, শয়নঘর দেখে মনে হল, তিনি একদিন ছিলেন এখানে। তিনি যে-পাহাড়প্রকৃতি দেখেছেন, তা দেখছি আমিও! ধন্য মনে হয় নিজেকে।

সিতংয়ের তেরো কিমি দূরে লাটাপাংচার, মহানন্দা অভয়ারণ্যের শীর্ষতম চূড়া। শীত নামতেই অরণ্য ভরে যায় পাখপাখালির বর্ণচ্ছটা ও কলকাকলিতে। প্রজাপতিরা ওড়াউড়ি করে পর্যটকের বুকের কাছে। সিতং থেকে সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায় দার্জিলিং থেকে। তাছাড়া কুড়ি-কিমির মধ্যে আছে কারশিয়ং, ডিলারাম, বাগোরা। যেতে পারেন ত্রিশ কিমির দূরত্বে সেঞ্চাল অভয়ারণ্যের ছবির গ্রাম চটকপুরে। এমনকি, চলে যেতে পারেন কালিম্পংয়ের সুবিখ্যাত ডেলো পাহাড়েও। সবটাই উপভোগ্য কেবল নির্জনতাপিয়াসীর। তবে, আপনি বারান্দায় বসে কফির কাপে আত্মমগ্ন হবেন, না বের হবেন দিগন্তরে, তা ঠিক করবেন আপনিই।

আমাদের সন্ধ্যার বারান্দাড্ডার কোনও শেষ নেই। পরচর্চা, ইতিহাস, রাজনীতি থেকে কবিতা ও গানের প্রবাহ শেষ হওয়ার নয় বাঙালির। কুমকুমের গান চর্চার নয়, মন ও মননের। প্রবীণ সুনন্দাদির কেবল মনীষাই নয়, তারুণ্যও প্রভাবিত করে আমাদের। শমিতের গলায় পুরাতনী খেলে ভাল। ঊর্মিলা গাইল না। পদ ভুলে যায় আজকাল। অভীকের ইউএসপি গন্ডারের তাড়া, কমলের মীরাসাধনা। সব মিলেমিশে জীবন জুড়ায়। তারপর রাত গভীর হলে অন্ধকার পাহাড় একান্তের ডাক পাঠায়।

ফেরার পথে দু-পাশে চা-বাগান। নয়নাভিরাম চা-বাগানের আড়ালে দেখি, জমে উঠছে চাপ-চাপ অন্ধকার, বুভুক্ষার হাহাকার, হৃদয় ও রুধিরের ধারা।

নেমে আসি নীচে, দৈনন্দিনে, নামতেই থাকি, অবনমনের কোনও শেষ নেই যেন।

-----------------

<বিধিবদ্ধ অনুরোধ : এই লেখা পড়ে কেউ যদি সাপ্তাহান্তিক ছুটি কাটাতে যেতে চান সিতংয়ে, তাহলে, দোহাই, যাবেন একান্ত দু-জনে, বা চার-ছজনের দলে। গ্রামে হইহল্লা করে, সশব্দ গান বাজিয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ, শিশু, পাখি ও প্রজাপতিদের সন্ত্রস্ত করবেন না। ফেলে আসবেন না মদের বোতল বা প্লাস্টিকবর্জ্য।>

north bengal tourism north bengal travelogue
Advertisment