"হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহ্লাদি
তিনজনেতে জটলা করে ফোকলা হাসির পাল্লা দিই"
কবির বিশ্ব জোরা নাম ননসেন্স কবিতার জন্য, কিন্তু বাঙালি জানে, সুকুমার রায় যা বলে গিয়েছেন, তা বেদের চাইতে কোনও অংশে কম নয়। কবি এই কবিতা রচনার সময় জানতেন না বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই গোটা দুনিয়াটা ছেয়ে যাবে লাফিং ক্লাবে। সেই কোন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে লোকে পার্কে কিমবা লেকে জড়ো হচ্ছেন হো হো করে হাসবেন বলে। মানুষ একটু ভালো থাকবে বলেই না এত শত চেষ্টা। হাসলেই, হ্যাঁ কেবল হাসলেই অনেকটা সুখী হওয়া যায়, এবার পরীক্ষিত হল তা।
আপনার হাস্যময় মুখই বলে দেয় আপনি অন্তর থেকে কতটা সুখী। সুখ আর হাসি কোনওটি পরিমাপযোগ্য নয়, তবে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চলা গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটাই প্রমানিত, হাসি সত্যিই মানুষকে আরও সুখী করে তুলতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, সদা হাস্যমুখের অভিব্যক্তিতে ভিন্ন আবেগ অনুভূত হয়, সেই আবেগই সুখের চাবিকাঠি। মেটা বিশ্লেষণ নামে একটি পরিসংখ্যান কৌশল ব্যবহার করে, গবেষকরা ১৩৮টি গবেষণা থেকে বিশ্বজুড়ে ১১হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা করে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিনাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির ছাত্র নিকোলাস কোলস বলেন, "প্রচলিত জ্ঞান ও সম্যক ধারণা থেকে এটা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি যা হাসলে নিজেরা ভিতর থেকে খানিক সুখী বোধ করি এবং রাগ হলে কিছুটা মেজাজি থাকি। কিন্তু মনস্তত্ত্ববিদরা গত একশো বছর ধরে এই ধারণা সম্পর্কে অসম্মতি প্রকাশ করে গেছেন।"
এই অসম্মতিটি আরও জোরদার হয় যখন ২০১৬ সালে সতেরো জন বৈজ্ঞানিকের দল প্রমাণ করতে কার্যত ব্যর্থ হন যে হাসি মনস্তাত্বিক ভাবে মানুষকে সুখী করে তোলে।
আরও পড়ুন দারিদ্র্য ছাপ ফেলতে পারে ডিএনএ-তে, বলছে সমীক্ষা
নিকোলাস কোলস জানান যে বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায় না যে মুখের অভিব্যক্তিগুলি মানসিক অনুভূতিগুলিকে আদৌ প্রভাবিত করতে পারে কি না।
তিনি আরও বলেন যে, কোনও এক ধরনের গবেষণার উপর নির্ভর করে কাজ করা হয়নি। মেটা বিশ্লেষণ নামে একটি পরিসংখ্যান কৌশল ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে এগারো হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা করে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন জার্নালে প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে, মুখের ভাবমূর্তি অনুভূতিদের উপর ছোটখাটো প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হাসি মানুষকে অন্তর থেকে সুখী করে তোলে, সাময়িক মেজাজ ক্রোধের সঞ্চার করে এবং বিরক্তি এক অন্তরবেদনার উদ্রেক করে। এই গবেষণা থেকে আরও বোঝা যাচ্ছে উত্তেজনাপূর্ণ অভিব্যক্তি কীভাবে মন ও শরীরের আবেগের মধ্যে সচেতনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করছে। তবে এখনও অভিব্যক্তির প্রভাব সম্পর্কে অনেক কিছু জানার বাকি আছে। কিন্তু মেটা অ্যানালিসিসের মাধ্যমে কিছুটা হলেও বোঝা গেল আবেগ কিভাবে কাজ করে।
আগামীতে এই গবেষণা মনস্ত্বত্বে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আশ্বাস গবেষণা মহলে।
Read the full story in English