scorecardresearch

লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়ায় খাবারের ছবি পোস্ট করা মানেই কি মানসিক বিকৃতি?

“ব্যাপারটাকে এত সহজে ব্যাখ্যা করা যাবে না। অনেকগুলো স্তর রয়েছে। একটা কথা খুব সত্যি, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনঘন যাতায়াত করি, লকডাউনের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব তাঁদের ওপর এখনও আসেনি”।

লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়ায় খাবারের ছবি পোস্ট করা মানেই কি মানসিক বিকৃতি?

বিগত দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে বাঙালির ড্রয়িং রুম ছাড়িয়ে রান্না ঘর, শোবার ঘরে পৌঁছে গিয়েছে কয়েকটা শব্দ। ‘কোয়ারেন্টাইন’, ‘লকডাউন’, ‘সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং’, ‘হটস্পট’ ইত্যাদি। পাকাপাকি ভাবে আস্থানা গেঁড়ে বসছে মানুষের মনেও। ঘরবন্দি জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ধরণ ব্যক্তিবিশেষে একেক রকম। কেউ ভয় পেয়েছেন। ঘনঘন হাত ধোয়া, ঘরদোর স্যানিটাইজ করা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কেউ বই পড়ছেন, ছবি দেখছেন নিয়মিত, কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু বেশিই ঘোরাফেরা করছেন।

ফেসবুক কিমবা হোয়াটসঅ্যাপে নিজেদের গাওয়া গান, লেখাও সঙ্গীদের সঙ্গে শেয়ার করে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। সেখানে সমস্যা হয়নি। তবে ফেসবুক, টুইট্যারে লকডাউনের রান্নাবান্না অথবা ‘ভুরিভোজ’ -এর ছবি নিয়ে একেক জনের প্রতিক্রিয়া একেক রকম। কেউ খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছেন ঘটনাটিকে, আর পাঁচটা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিটির মতো। কেউ আবার বলছেন সারা বিশ্বে যখন মৃত্যুমিছিল চলছে, মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছে, তখন সামাজিক মাধ্যমে নিজের রসনা তৃপ্তির সাজ সরঞ্জামের ছবি দেওয়া মানেই মানসিক বিকার ছাড়া আর কিছু না। আসুন জেনে নিই কী বলছেন মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ?

আরও পড়ুন, লকডাউনেও সুরের ‘হোম ডেলিভারি’, ভায়োলিন নিয়ে হাজির তরুণ

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মোহিত বাবু জানিয়েছেন, “ব্যাপারটাকে এত সহজে ব্যাখ্যা করা যাবে না। অনেকগুলো স্তর রয়েছে। একটা কথা খুব সত্যি, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনঘন যাতায়াত করি, লকডাউনের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব তাঁদের ওপর এখনও আসেনি। সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং এক ধরনের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। অনেকেই দিনে এক বারের বেশি খবর পড়ছেন না, বা দেখছেন না, দেখলে তাঁর বা তাঁদের অবসাদ আসছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের তৈরি খাবারের ছবি পোস্ট করছেন। প্রথমে আমার নিজেরই এটা দেখে অদ্ভুত লেগেছিল। কিন্তু এভাবে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক হবে না। সবাই নিজের নিজের মতো করে ভালো থাকার চেষ্টা করছি। সবার ভালো থাকার মেকানিজম এক রকম নয়। আর সেটা আমরা তাঁদের থেকে কেড়েও নিতে পারি না”।

তিনি আরও জানালেন, “আমি এই লকডাউনেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করেছি। খুব সংবেদনশীল, শিক্ষিত মানুষ, যাদের আমি অন্য পরিস্থিতিতে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে দেখেছি, সেরকম মানুষকে কোয়ারেন্টাইন কালে প্রবাসে নিজের তৈরি খাবারের ছবি পোস্ট করতে দেখেছি। হয়তো কিছুটা প্রসংশা পাবার জন্যই, কিন্তু তা দোষের নয়। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন তিনি, আমার নিজের চোখে দেখা। খাবারের ছবি পোস্ট করলেই একটা মানুষ সমাজসচেতনতাহীন বা সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এমন ভাবার কারণ নেই। আমি শুধু বলব, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জায়গায় আছি, তাঁদের একটু সহিষ্ণু হওয়া দরকার। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকটা নিয়েও আমাদের একটু সচেতন থাকতে হবে। সমাজের নীচের তলার মানুষের সঙ্গে যে দূরত্ব আমাদের তৈরি হয়েছে, তা যত তাড়াতাড়ি ঘোচে, ততই ভালো”।

 

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Social trend of posting photoes of home made food