Advertisment

রজঃস্বলা হয়েছেন দেবী, উৎসব আর মেলায় মেতেছে ভারত

দূর্গাপুজোর অঞ্জলি বা কালীপুজোয় বাজি ফাটানো নয়, এর বাইরেও রয়েছে একটা বিশাল উৎসবের জগৎ, খোদ ভারতেই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মিললেও বেশির ভাগটাই অধরা। রইল এমনই কিছু উৎসবের হদিশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ambubachi festival in Guwahati

Ambubachi festival in Guwahati: গুয়াহাটীর কামাক্ষ্যা মন্দির

সকাল সকাল উঠেই চোখে পড়ল, ঢেকে দেওয়া হয়েছে ঠাকুরের মুখ। এই অনিয়মের উত্তর হয়ত বহুদিন ধরেই খুঁজেছি আমরা অনেকেই। তারপর একটা বয়সের পর গিয়ে জানা গিয়েছে একটা দিন ঋতুকালীন সমস্যায় পড়েন স্বয়ং দেবীও। এবং মেলা জাঁকজমকে একদল মানুষ রীতিমতো উৎসবের তকমা দিয়েছেন এই ঘটনাকে। বর্তমান প্রজন্ম এসব খানিকটা বিস্মৃত হলেও আসলে দূর্গাপুজোর অঞ্জলি বা কালীপুজোয় বাজি ফাটানো নয়, এর বাইরেও রয়েছে একটা বিশাল উৎসবের জগৎ, খোদ ভারতেই। যেখানে শুধু জনশ্রুতিকে কেন্দ্র করেই বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মিললেও বেশির ভাগটাই অধরা। রইল এমনই কিছু উৎসবের হদিশ।

Advertisment

আরও পড়ুন: ম্যাজিক নয়, বুজরুকি নয়, ভেল্কি নয়, এ হলো ইন্দ্রিয়ের খেলা

অম্বুবাচী মেলা, গুয়াহাটী

একেবারে হইহই রব, শুরু হয়েছে অম্বুবাচী মেলা। কামাক্ষ্যা মন্দির চত্ত্বরে নাগা সন্নাসীদের ভীড় চোখে পড়ার মত। গোটা ভারতের অন্যতম প্রাচীন প্রথা এই অম্বুবাচী। কথিত আছে দেবী কামাক্ষ্যা রজঃস্বলা হন জুন মাসের এই সময়। আর সেই প্রথার প্রভাবেই এই সময় চারদিন বন্ধ থাকে গুয়াহাটীর বিখ্যাত কামাক্ষ্যা মন্দির এবং গর্ভগৃহের প্রবেশপথ। পুরাণ অনুযায়ী দক্ষযজ্ঞের পর সতীর যোনি পড়েছিল এই কামাক্ষ্যায়। তাই বিশ্বমাতৃর প্রজননের যোগ রয়েছে বলে মনে করেন ধার্মিক মানুষজন। মন্দির খুললে বিগ্রহের গায়ে চড়ানো রক্তবস্ত্র সংগ্রহের জন্য ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। জনশ্রুতি, মন্দিরের মুখ্য পুজারি কেন্দুকলা ছিদ্র রেখে অম্বুবাচীর সময় মায়ের নৃত্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন নরনারায়ণ ও তাঁর ভাই চিলারায়কে। তবে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের কথায়, আষাঢ়ের বর্ষায় ব্রহ্মপুত্রের জলের তোড় বেড়ে গিয়ে লাল হয়ে ওঠে। পলি জমার কারণে জল সরলে ফলন ভাল হয়।

থিমিথি, তামিল নাড়ু

দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর থিমিথি উৎসব। বছরের পর বছর ধরে এই প্রথা মেনে আসছেন সেখানকার মানুষ। পুরাণ অনুযায়ী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদীকে নিজের সতীত্ব প্রমাণ করতে হেঁটে যেতে হয় আগুনের ওপর দিয়ে। আর সেখান থেকেই আসে এই প্রথা। আজও তামিল নাড়ুতে চলে আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার এই রীতি। আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটা এবং আরও ১৭টি কঠিণ ধাপের মধ্যে দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ প্রমান করাকে ইশ্বরের নির্দেশ বলেই মনে করেন তাঁরা।

publive-image থিমিথি, তামিল নাড়ু

রজ, উড়িষ্যা

এই উৎসবের আরেক নাম মিথুন সংক্রান্তি। তিন দিনের এই উৎসব জুন মাসের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হয়, এবং দ্বিতীয় দিনটিকে ধরা হয় মিথুন মাসের শুরু, অথবা বর্ষাকাল আরম্ভ। উৎসবের তিনদিন প্রিথিবিকে রজঃস্বলা মেনে চতুর্থ দিন তাঁকে স্নান করানো হয়, দিনটিকে বলা হয় 'বসুমতি গাধুয়া'/ মধ্যযুগে এই উৎসব জনপ্রিয়তা লাভ করে কৃষি উৎসব হিসেবে, এবং পূজিতা হন ভূদেবী, যিনি জগন্নাথ-পত্নীও বটে। আধুনিক কালে এই তিনদিন মহিলারা সমস্ত গৃহকর্ম থেকে ছুটি পান, এবং বাড়িতেই চলে নানারকমের পিঠে বানানো, খেলাধুলো, যাতে পুরুষরাও অংশগ্রহণ করেন।

publive-image রজ উৎসব, উড়িষ্যা

নাগপঞ্চমী

নাগপঞ্চমী পালন করেন অনেকেই। একটু খেয়াল করলেই খোদ কলকাতাতেও চোখে পড়তে পারে এই উৎসব। জনশ্রুতি,

পারিবারিক সমৃদ্ধির জন্য নাগদেবতার আশীর্বাদকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ভারতীয়রা। শ্রাবণ মাসের পঞ্চমী তিথীতে পালন করা হয় এই উৎসব। উত্তর ভারতে এর প্রচলন বেশি। সাপকে দুধ খাইয়ে পুজো করা হয় এদিন। কথিত আছে, মহাভারতের অর্জুনের স্ত্রী উলুপি এমনই এক নাগকন্যা। মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, গুজরাট, উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ চিনেও পালন করা হয় নাগ পঞ্চমীর এক রূপ।

বেবী ড্রপ, মহারাষ্ট্র

এই রীতিও পেয়েছে উৎসবের তকমা। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু থেকে সদ্যজাত শিশুদের ফেলা দেওয়া হচ্ছে নিচে। তাদের ধরার জন্য কাপড় পেতে নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। অবাক হলেন তো? এতে আমি আপনি অবাক হলেও মহারাষ্ট্রের সোলাপুরের কাচে বাবা দরগায় গেলে হামেশাই চোখে পড়তে পারে এই দৃশ্য। এটাই প্রথা। প্রায় ৭০০ বছর ধরে সেখানকার হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায় মেনে আসছেন এই প্রথা। কর্ণাটকের ইন্দিতে শ্রী সন্তোষেশ্বর মন্দিরেও চোখে পড়বে একই ছবি। আশ্চর্যের বিষয়, দ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস-এর তরফে তদন্ত করে দেখা গিয়েছে এই প্রথায় কোন শিশুর আঘাত পাওয়ার কোন ঘটনা এখনও ঘটেনি।

বেনীদান, এলাহাবাদ

হিন্দু নিয়মে বিয়ের সময় সাত জন্ম একে অপরের সঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন স্বামী-স্ত্রী। এখানকার প্রথা অনুযায়ী এই প্রতিজ্ঞা দৃঢ়তর হয় মাথার বেনী দান করার পরে। ধুমধাম করে পুজার্চনা এবং যজ্ঞের আয়োজন করা হয় এলাবাদের ত্রিবেনী সঙ্গমে। যা যা রীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন হয় সবই আবারও অনুষ্ঠিত হয় এদিন। সুন্দর করে সেজে মাথায় বিনুনী বাঁধেন নতুন বৌ। সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পর স্বামীর কোলের ওপর বসেন স্ত্রী এবং তাঁর মাথার বিনুনীটি কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয় ত্রিবেনী সঙ্গমের জলে। এই প্রথায় পরিবার সুখ সমৃদ্ধি লাভ করে বলেই বিশ্বাস করেন ভক্তরা।

indian festivals rituals
Advertisment