শ্রাবণ মাস শিব বা দেবাদিদেব মহাদেবের অত্যন্ত পছন্দের মাস বলেই হিন্দুধর্মে পরিচিতি। এই মাসে ভক্তিভরে দেবাদিদেবের স্মরণ করেন ভক্তরা। কথিত আছে এই মাসেই শিবের উপাসনা করে অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন চন্দ্র দেব। আর, যেখানে তিনি শিবের উপাসনা করেছিলেন, তা প্রভাস ক্ষেত্র নামে পরিচিত। চন্দ্র দেবতার প্রতি জ্যোতির্ময় রূপে কৃপা প্রদর্শন করায় প্রভাস ক্ষেত্রে শিবের লিঙ্গকে জ্যোতির্লিঙ্গ বলা হয়। এটাই ভারতের প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ। শিব ভক্তদের কাছে চিরন্তন পীঠ। জায়গাটি গুজরাত রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে সৌরাষ্ট্রের কাছে বেরাবলে অবস্থিত। সোম বা চন্দ্র দেবতার অভিশাপ নির্মূল করায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন চন্দ্রদেবের প্রভু বা নাথ। তাই এখানে শিব পরিচিত সোমনাথ নামে। আর, এখানে যে শিবমন্দির, তার নাম সোমনাথ মন্দির।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, চন্দ্র দেব প্রজাপতি দক্ষের কন্যাদের বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু, স্ত্রী রোহিণীর প্রতি অত্যাধিক আসক্তির কারণে তিনি বাকি ২৬ জন স্ত্রীকে উপেক্ষা করা শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই ২৬ জন স্ত্রী ছিলেন প্রজাপতি দক্ষের কন্যা। তাঁরা তাঁদের বাবা প্রজাপতি দক্ষর কাছে এনিয় স্বামী চন্দ্রদেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রজাপতি দক্ষ তখন চন্দ্রদেবকে ক্ষয়িত হওয়ার চরম অভিশাপ দেন। সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই চন্দ্র দেব এরপর তাঁর আরাধ্য ভগবান শিবের শরণাপন্ন হন। তিনি প্রভাস তীর্থে ভগবান শিবের উপাসনা করেন। আর, চন্দ্রদেব অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। চন্দ্রদেবের আরাধ্য বলে এই প্রভাস ক্ষেত্রে শিব সোমেশ্বর মহাদেব নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন- একসময় শুধু তান্ত্রিক, কাপালিকরাই আসতেন এই সতীপীঠে, পুজো দিতেন বর্গি সেনাপতিও
পুরাণ অনুযায়ী, সত্যযুগে সোমেশ্বর মহাদেব পরিচিত ছিলেন ভৈরবেশ্বর নামে। ত্রেতাযুগে তিনি পরিচিত হন শ্রাবণিকেশ্বর নামে। দ্বাপর যুগে পরিচিত হন শ্রীগলেশ্বর নামে। ব্রহ্মার উপদেশ মেনে চন্দ্রদেব এখানে একটি স্বর্ণ শিবমন্দির নির্মাণ করে দেন। কথিত আছে, সেই মন্দির কালক্রমে ধ্বংস হয়। এরপর ত্রেতাযুগে শিবভক্ত রাবণ এখানে একটি রৌপ্য স্বর্ণমন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন। দ্বাপর যুগে আবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে চন্দনকাঠের শিবমন্দির তৈরি করেন। কলিকালে মহারাজা ভীমদেব এখানে পাথরের শিবমন্দির তৈরি করে দেন। তারপরও বহুবার মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বিদেশি লুঠেরাদের আক্রমণের শিকার হয়। পুনরায় নির্মিতও হয়েছে।