চাণক্যের পরিচয় ভারতের কাউকে নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিদেশেও চাণক্যকে নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। সেই মগধ সাম্রাজ্যের জমানার এক পণ্ডিত যে কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে পারেন, কেবলমাত্র চাণক্যের শ্লোকগুলো পড়লে তা বোঝা যায়। কারণ, সেই সব শ্লোক বা চাণক্যের বক্তব্য আজও প্রাসঙ্গিক। অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি, ভারতের এরাজ্যে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গেও তা আজও অতি গুরুত্বপূর্ণ।
মনে হতে পারে যে কেন একথা বলা হচ্ছে? কারণ, চাণক্য বলে গিয়েছেন- 'দূরতঃ শোভতে মূর্খো লম্বশাট পটাবৃতঃ। তাবচ্চ শোভতে মূর্খো যাবত্ কিঞ্চিন্ ন ভাষ্যতে।' যার অর্থ হল- সুন্দর পোশাক পরে কখনও অজ্ঞতা দূর করা যায় না। সুন্দর বেশভূষা পরে অজ্ঞতা ঢাকার চেষ্টা করে অজ্ঞ ব্যক্তি। সুন্দর বেশভূষা অবশ্যই যে কেউ পরিধান করতে পারে। কিন্তু, সুন্দর বেশভূষা পরে অজ্ঞ ব্যক্তি বিজ্ঞসমাজে মেশার চেষ্টা করলেও তা কখনও সফল হয় না।
কারণ, বিজ্ঞ ব্যক্তিরা সমাজে শিক্ষায়-দীক্ষায়, সুষ্ঠু চিন্তাভাবনায়, পরিশীলিত কথাবার্তায় অনেক দক্ষ। তাই মূর্খ ব্যক্তি সুধী মহলে যতই সুন্দর পোশাক পরে প্রবেশ করুন না-কেন, তাঁর আচার-আচরণ এবং কথাবার্তা কখনও সুধীমণ্ডলীর মত হয় না। ফলে, সুধী সমাজে ওই অজ্ঞ ব্যক্তি উপহাসের পাত্র হয়ে ওঠে।
বর্তমান সমাজের দিকে তাকালেও দেখা যায় যে শিক্ষার মান অনেক পড়ে গিয়েছে বলে লোকজন হা-হুতাশ করছেন। একইসঙ্গে দেখা যায় সমাজে পোশাকের প্রতি বা রূপচর্চার প্রতি, বলা ভালো দেখনদারির প্রতি মনোভাব অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জেরে কে কতটা উচ্চমানের তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু, যখন কোনও ব্যক্তি কথাবার্তা বলেন, তখন ধীরে হলেও বোঝা যায় যে সেই ব্যক্তি ঠিক কতটা প্রাজ্ঞ বা কতটা জ্ঞানী।
আরও পড়ুন- আনন্দময়ী মা, ভারতের অধ্যাত্মসাধনার অন্যতম নক্ষত্র, বাংলায় জন্মালেও যাঁর খ্যাতি দেশজোড়া
ঠিক এই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন মহামতি চাণক্য। সেই যুগেও তিনি পোশাকের সঙ্গে যে ব্যক্তির জ্ঞানের কতটা পার্থক্য রয়েছে, তা স্পষ্ট উপলব্ধি করেছিলেন। আর, সেই ব্যাপারেই জনসাধারণকে সাবধান করে দিয়ে গিয়েছেন।