জুন মাস শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তারপর জুলাইয়ের প্রথমেই রথযাত্রা। তার দিন সাতেক যেতে না-যেতে উলটোরথ। আষাঢ় মাস, তারপর আর ক'দিন। শুরু হয়ে যাবে শ্রাবণ। আর, এই শ্রাবণ মাস কিন্তু শিবভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখবেন, এই সময় অনেকেই কাঁধে বাঁক নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালতে যান। এক বা দু'জন নয়। সংখ্যাটা দলে দলে।
প্রতিদিন না, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে রবিবার বা সোমবার করে এই জল ঢালার জন্য বাঁক নিয়ে ভক্তরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। বহু শিব মন্দির আছে, যেখানে বছরের পর বছর এভাবেই জল ঢালেন ভক্তরা। আর, সেজন্য সারাবছর একটু আগেভাগে বন্ধ হলেও, শ্রাবণ মাসের সোমবার করে কিছু শিবমন্দিরের দরজা বেশি সময় খোলা থাকে।
এবছর ১৪ জুলাই শুরু হচ্ছে শ্রাবণ মাস। সোমবার পড়েছে ৪টি। প্রথম সোমবার ১৮ জুলাই। দ্বিতীয় সোমবার ২৫ জুলাই, তৃতীয় সোমবার ১ আগস্ট। আর, চতুর্থ বা এবারের শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার পড়েছে ৮ আগস্ট। আর, শেষ সোমবারের ঠিক চার দিন পরই ১২ আগস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমা। ওই দিনই এবছরের শ্রাবণ সংক্রান্তি বা শ্রাবণ মাস শেষ হচ্ছে।
এবার প্রশ্ন হল, কেন শ্রাবণ মাসের সোমবার করে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য ভক্তরা এই উৎসুক থাকেন? এর কিন্তু বিশেষ কারণ আছে। তা-ও একটি নয়, বেশ কয়েকটি। তার প্রথম হল, শ্রাবণ মাসে গুরু পূর্ণিমার দিন সপ্তঋষিকে শিষ্যত্ব দান করেছিলেন শিব। সেই জন্য শিবকে আদিগুরু বলা হয়। শুধু শিষ্যত্ব দান করাই না। শিষ্যরা যাতে সিদ্ধ হতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে তিনি যোগীন্দ্রও হয়েছিলেন। যোগীন্দ্রর অর্থ, যিনি যোগীদের রাজা। এই রূপে ভগবান শিব তাঁর যোগী শিষ্যদের সমস্ত যোগ সাধনা এগিয়ে নিয়ে যান। আর, যেটুকু সাধনা হয়েছে, তা রক্ষা করেন।
আরও পড়ুন- ভারতের একমাত্র মন্দির, যেখানে রাখা আছে সাধকের হাজার বছরের পুরনো দেহ
দ্বিতীয় কারণ হল, এই মাসেই সমুদ্র মন্থন করে বিষ উঠে এসেছিল। ত্রিভুবন রক্ষা করার জন্য সেই বিষ পান করেছিলেন ভগবান মহাদেব। হয়েছিলেন নীলকণ্ঠ। যা তাঁর যোগীন্দ্রের ভূমিকায় রক্ষকের একটি রূপ। বিষের জ্বালায় জর্জরিত ভগবান মহাদেবের কষ্ট দূর করার জন্য তাঁর মাথায় জল ঢালেন ভক্তরা। কেউ আবার জলের বদলে দুধওও ঢালেন শিবের মাথায়। একে বলা হয় জলাভিষেক এবং দুগ্ধাবিশেষ।
পাশাপাশি, এই মাসেই পার্বতীকে বিয়ে করেছিলেন শিব। রুদ্রপ্রয়াগের ত্রিযুগীনারায়ণ মন্দিরে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। সতীর দেহত্যাগের পর শিব আর কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এই শ্রাবণেই তিনি রাজি হন। যা আসলে তাঁর আশীর্বাদক রূপের প্রকাশ। এমনটাই মনে করেন ভক্তরা। আর, এই রূপে শিবের আশীর্বাদ পেতেই শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলোয় শিবের মাথায় জল ঢালেন ভক্তগণ।