scorecardresearch

এই মন্দিরে আছে তাঁর কুঠার, বিরাজ করেন স্বয়ং পরশুরাম

এই কুঠারে আজও মরচে ধরেনি।

Parshuram_Dham

হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। কথিত আছে, তিনি অমর। আর, এই মন্দিরে রয়েছে তাঁর কুঠার। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে স্বয়ং পরশুরাম থাকেন। এই মন্দির রয়েছে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে গুমলা জেলায়। গুমলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ডুমরিতে। এই ডুমরি ব্লকেই ৩০০ ফুট উঁচু লুচুতপাট পাহাড়ের ওপর রয়েছে বাবা টাঙ্গিনাথ ধাম। পরশুরামের কুঠারকে হিন্দিতে টাঙ্গি বলে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে টাঙ্গিনাথ ধাম অত্যন্ত বিখ্যাত।

বহু শিবলিঙ্গ এবং প্রাচীন দেবদেবীর মূর্তি এখানে খোলা আকাশের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটারজুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গিনাথ ধাম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরপুর। এর প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে ইতিহাস। কথিত আছে, ভগবান শিবের থেকেই টাঙ্গি বা কুঠার পেয়েছিলেন পরশুরাম। এই টাঙ্গিনাথ ধামও শিবের মন্দির। এই মন্দির অত্যন্ত প্রাচীন। এখানে পাওয়া বিশাল আকারের কুঠারটি দেখতে অনেকটা ত্রিশূলের মত।

রামায়ণ-মহাভারত অনুযায়ী সাত জন অমর বা চিরঞ্জীবী রয়েছেন। যাঁদের অন্যতম পরশুরাম। রামায়ণ অনুযায়ী, ত্রেতাযুগে জনকপুরে সীতার স্বয়ম্বর সভায় হরধনু ভেঙেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। শিবের থেকে প্রাপ্ত হরধনু পরশুরাম জনক রাজাকে দিয়েছিলেন। সেই হরধনু ভাঙার খবরে স্বভাবতই পরশুরাম উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি লক্ষ্মণের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। পরে, নিজের ভুল বুঝে কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য কুঠারটি এক পাহাড়ের ওপর পুঁতে দেন। আর, পাশের ঘন জঙ্গলে তপস্যা শুরু করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, টাঙ্গিনাথ ধাম সেই স্থান। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এখানেই পরশুরাম ভগবান শিবের উপাসনা করেছেন। টাঙ্গিনাথ ধামে পরশুরামের পদচিহ্নও পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি ভক্তদের।

আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে মাটিতে পুঁতে রাখা টাঙ্গি বা কুঠার যুগ যুগ ধরে অক্ষত রয়েছে। তাতে কোনও মরচে ধরেনি। এই কুঠার মাটির নীচেও অনেকখানি রয়েছে। ভক্তদের দাবি, এই কুঠার বহুবার চুরি করা ও ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে কোনও লাভ হয়নি। উলটে, যারা এই কুঠার চুরি বা ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল, তাদের ক্ষতিই হয়েছে।

আরও পড়ুন- হারানো বস্তু প্রাপ্তি, দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা, ভরসা জাগ্রত দেবী গুপ্তমণি

এলাকায় প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী লোহার উপজাতির লোকজন কুঠারটি উপড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। না-পেরে কুঠারের ওপরের অংশটি কেটে নিয়েছিল। এর জেরে লোহার সম্প্রদায়ের মধ্যে মরক লাগে। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। লোহার উপজাতিরাও এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যায়। আজও তাঁরা টাঙ্গিনাথ ধাম এড়িয়ে চলেন। এখানে আসেন না। একই ব্যাপার এলাকার কামার সম্প্রদায়ের মানুষজনের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাঁরাও টাঙ্গিনাথ ধামের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেন না।

স্থানীয় ‘বাইগা’ এবং ‘পাহান’ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ এই মন্দিরের পুরোহিত। মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে তিন দিন ধরে টাঙ্গিনাথ ধামের মন্দির চত্বরে মেলা বসে। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা টাঙ্গিনাথ ধামে খননকার্য চালিয়ে হিরে, মুকুট, সোনা ও রূপোর গয়না-সহ বহু মূল্যবান জিনিস পান। যদিও পরে খননকার্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কেন, তা স্পষ্ট করেনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Sri parshuram temple at tanginath dham in gumla district in jharkhand