শাস্ত্রমতে দেবী মহাশক্তি বঙ্গদেশে কালিকা বা কালী রূপে ভক্তদের পাশে থাকেন। সেই কারণে, ওপার হোক বা এপার বাংলা, দেবী কালীর মন্দিরের সংখ্যা বেশ বেশি। সেই শক্তিসাধনার অঙ্গ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে কালী মন্দির। তার মধ্যে জাগ্রত মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম না। কালীঘাটের কালীমন্দিরই হোক বা দক্ষিণেশ্বরের মন্দির। এমন হাতেগোনা মন্দিরের সংখ্যা জানলেও ভক্তরা এমন অনেক মন্দিরের কথা জানেন না, যেগুলো অত্যন্ত জাগ্রত। যাঁরা জানেন, তাঁদের সেই প্রচার দূর-দূরান্তে নির্দিষ্ট ভক্তদের বাইরে পৌঁছয় না।
এমনই এক জাগ্রত কালীমন্দির হল বীরভূমের আকালিপুরের গুহ্যকালিকা মন্দির। নলহাটি এলাকার গ্রাম এই আকালিপুর। মহারাজা নন্দকুমারের জন্মস্থান বলে পরিচিত ভদ্রপুরের কাছে আকালিপুর গ্রাম। ট্রেনে চেপে গেলে আজিমগঞ্জ-নলহাটি শাখার লোহাপুর স্টেশনে নামতে হয়। সেখান থেকে সহজেই যাওয়া যায় আকালিপুর গ্রামে। কথিত আছে এই গুহ্যকালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং মহারাজ নন্দকুমার। সর্পের ওপর আসীন, সর্পের আবরণে ভূষিতা, বরাভয়দায়িনী, দ্বিভুজা জগন্মাতা গুহ্যকালী।
আরও পড়ুন- যোগেশ্বর শিব, যাঁর আশীর্বাদ পেতে অসংখ্য ভক্ত ভিড় জমান মুর্শিদাবাদের বড়ঞাঁয়
তাঁর মন্দিরটি উঁচু বেদির ওপর তৈরি, ইটের তৈরি আটকোণা, দক্ষিণমুখী। মন্দিরের গর্ভগৃহের চারদিকে প্রদক্ষিণ করার পথ আছে। এর তিনটি প্রবেশদ্বার। তার মধ্যে মূল দ্বারটি রয়েছে দক্ষিণ দিকে। এছাড়াও আরও দুটি প্রবেশদ্বার আছে এই মন্দিরে। তার একটি পূর্ব, অন্যটি পশ্চিম দিকে। যা পাথরের তৈরি। কথিত আছে, এই মন্দির নির্মাণের সময় দেওয়াল ফেটে যায়। ভক্তদের দাবি, তার পর রাতে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যেহেতু শ্মশানবাসিনী, তাই মন্দিরের দরকার নেই। এখনও দেবীর সেই নির্দেশের প্রমাণ হিসেবে, মন্দিরের উত্তর-পূর্ব দিকে দুটি ফাটল রয়েছে।
১১৭৮ বঙ্গাব্দের ১১ই মাঘ এই মন্দির তৈরি হয়েছিল রটন্তী কালীপুজোর দিন। তাই প্রতিবছর মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজোর দিন বিশেষ আয়োজনের সঙ্গে দেবীর পুজো করা হয়। দেবীর মূর্তিটি কালো পাথরের। এমনিতে যাঁর নিত্যপুজো চলে। তবে, রটন্তী কালীপুজোর সময় আশপাশের তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন পুজো দিতে। কারণ, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত বলেই তাঁরা বিশ্বাস করেন।