দুর্গাপুজোর অভিন্ন অঙ্গ হল চণ্ডী। আর, সেই চণ্ডীতে রয়েছে মহর্ষি মেধসের কথা। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছে মহর্ষি মেধসের আশ্রম। সেখানে রয়েছে দুর্গামন্দিরও। দেবীর নাম শ্যামরূপা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এখান থেকেই দুর্গাপুজো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
যদিও ইতিহাসবিদদের মতে, রাজা লক্ষ্মণ সেনের সেনাপতি ও পরবর্তী সময়ে নিজেই রাজা হয়ে বসা ইছাই ঘোষ দেবী শ্যামারূপার মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। কথিত আছে, রাজা ইছাই ঘোষকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে যুদ্ধে যেতে মানা করেছিলেন। কিন্তু, ইছাই সেই নিষেধ মানেননি। সপ্তমীর দিনই যুদ্ধে চলে যান। যুদ্ধে রাজা পরাজিত ও নিহত হন।
সেই মন্দিরেই দেবী শ্যামারূপা পূজিতা হয়ে আসছেন। পশ্চিম বর্ধমান সীমান্তে অজয় নদী। তা পেরোলেই বীরভূম। এই সীমান্ত অঞ্চলে ১০ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে শাল-মহুয়া-পিয়ালের ঘন জঙ্গল। তারই মধ্যে রয়েছে দেবী শ্যামরূপার মন্দির।
লাল মাটির রাস্তা ধরে ঘন জঙ্গলের পথ দিয়ে এই মন্দিরে পৌঁছতে হয়। রীতিমতো অনাড়ম্বর ভাবে ঐতিহ্য মেনে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়। যা দেখতে ভিড় করেন কয়েক লক্ষ মানুষ। কারণ, এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একের পর এক অলৌকিক কাহিনি।
আরও পড়ুন- বাংলার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো, যেখানে জাগ্রত দেবী পূরণ করেন ভক্তের মনোবাঞ্ছা
কথিত আছে আগে এই মন্দিরে নরবলিদান প্রথা ছিল। পরম বৈষ্ণব কবি জয়দেব সেই নরবলিদান বন্ধ করতে এই মন্দিরে ছুটে এসেছিলেন। তিনি প্রার্থনার জোরে মন্দিরের দেবীমূর্তির মধ্যে শ্যামের রূপ সকলকে দেখিয়েছিলেন। সেই থেকেই দেবীর নাম ভক্তদের কাছে শ্যামরূপা। আর, তখন থেকে এই মন্দিরে বন্ধ হয়ে যায় নরবলিদান প্রথা।
তবে, আজও সপ্তমীর দিন পূজা শেষে দেবীকে লাউ বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন ও সন্ধিপূজায় ছাগল বলির প্রথা প্রচলিত রয়েছে। পুজোয় থাকে নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা। কথিত আছে, এখানে অষ্টমীর সন্ধিপুজোর সময় বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির থেকে তোপধ্বনির আওয়াজ শোনা যায়। এখন তোপের বদলে শোনা যায় পটকার আওয়াজ। ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরে দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অসম্ভবও হয়ে ওঠে সম্ভব।