Advertisment

স্টুলিশ কি ফুলিশ বানাচ্ছে নেটিজেনদের? নতুন এই অ্যাপ ফিভারে কতটা কাবু ফেসবুক!

সপ্তাহখানেক ধরে আরও এক নতুন ভাইরাল ফিভারে ভুগছেন নেটিজেনরা। ফেসবুকের টাইম লাইন জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা পায়রা। নাম তার স্টুলিশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

স্টুলিশ

সপ্তাহখানেক ধরে আরও এক নতুন ভাইরাল ফিভারে ভুগছেন নেটিজেনরা। ফেসবুকের টাইম লাইন জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা পায়রা। নাম তার স্টুলিশ। সারাহার পর উড়ো চিঠির এ এক নতুন অ্যাপ। শর্তও সেই একই, ভালবাসা, প্রেম, রাগ, অভিমানের সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি পৌঁছে দেওয়া যাবে অনায়াসেই। তবে সেই বার্তায় মিলবে না প্রেরকের হদিস, যদি না সে নিজে ধরা দেয়। অনলাইনে আইওএস অথবা অ্যান্ড্রয়েড প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায় এন এইচ এন্টারটেইনমেন্টের বানানো অ্যাপটি৷ তবে ইউজাররা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অভিযোগও জানিয়েছেন অ্যাপটি সম্পর্কে। ব্যবহারকারীদের লগ ইন এবং ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে।

Advertisment

তবে কোনও কিছুতেই থামতে নারাজ ইউজাররা। অ্যাপ ডাউনলোড করে শুধু লিঙ্কটা শেয়ারের অপেক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে বেল বাজতে শুরু করছে ফোন স্ক্রিনে। মনের কথা পৌঁছে দিচ্ছে সাদা পায়রা। কয়েকমাস আগেও এ হেন হুজুগে মেতেছিলেন ফেসবুক ইউজাররা। Sarahah.com এর বার্তায় ছেয়ে গিয়েছিল ফেসবুক। কিন্তু পাশাপাশি এসবে বেশ বিরক্তও হচ্ছেন একদল নেটিজেন। এ হেন উৎপাতে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা স্টুলিশ, সারাহা ইউজারদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তাঁরা।

একজন ফেসবুক ইউজার সুলতা ব্যাপারীর কথায়, "হুজুগে মেতে সারাহা ডাউনলোড করেছিলাম, তারপর খুব বোকাবোকা লাগলো, বিরক্ত হয়ে ডিলিট করে দিয়েছি। আর করিনি এসব, আসলে ওখানে কে আমায় মেসেজ পাঠালো, সে কে আমি জানতে পারছিনা। আর অনেকেই মজা করেই মেসেজ পাঠায় এ ক্ষেত্রে। দেখা গেছে একটা মেয়েই আরেকজন মেয়েকে ছেলে সেজে মেসেজ করছে। আমার মনে হয় এটা শুধুই সময় নষ্ট। আমার যদি সত্যিই কোনও অ্যাডমায়ারার থাকে তাহলে সে আমায় প্রকাশ্যেই বলুক। আমি যখন জানতেই না পারি কে আমায় অ্যাডমায়ার করে, তার মেসেজ পড়ে আমার কী হবে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত মেসেজ, কথা ভাললাগা, খারাপ লাগায় টাইমলাইন ভরিয়ে তোলার দরকার মনে করিনা।"

আরও পড়ুন:  খুশি থাকুন কাজের জায়গাতেও! কীভাবে? রইল কয়েকটি টিপস

তবে স্টুলিশ ইউজার সুদেষ্ণা দত্তর মত এ ক্ষেত্রে একেবারেই অন্য। "অনেক কথা লোকে বলে উঠতে পারে না। স্টুলিশ বা সারাহা সেগুলোর একটা মাধ্যম মাত্র। এতে পরিচয় গোপন থাকে ঠিকই তবে কারও উদ্দেশ্যে করা মেসেজ তাঁর কাছে খুব সহজেই পৌঁছে যায়, তা সে ভাল লোক বা খারাপ লোক যাই হোক। আসলে না বলা, না জানা কথাগুলো জানার জন্যই এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করছি। সময়ও কাটছে, মজাও লাগছে।"

তবে এ ধরনের উটকো অ্যাপ নিয়ে আগেই অশনী সংকেত দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন এই ধরনের অ্যাপে রেজিস্টার করার সময় ইমেল আইডি বা ফেসবুক মারফত লগ ইন করার ফলে ব্যক্তিগত ডেটা ফাঁস হতে পারে। বাড়তে পারে হ্যাকিং-এর সমস্যা। তাই অনলাইনে যেকোনও রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্য়ই সতর্ক হওয়া দরকার প্রত্যেকের।

তবে এই সটুলিশ ঝড়েও তথ্য প্রযুক্তি কর্মী রিতম দাসের সারাহাই সাহারা। তাঁর কথায় "স্টুলিশ আর সারাহায় যখন কোনও অমিল নেই, আলাদা করে স্টুলিশ করার কী দরকার? আসলে ভেবেছিলাম আমার সম্বন্ধে লোকের কী মতামত, যেগুলো কেউ সামনাসামনি বলে উঠতে পারেনা, সেটা এই অ্যাপের সাহায্যে জানতে পারবো। তবে আশা অনুযায়ী ফল মিলল না। বলা যায় ২০ শতাংশ জেনুইন কনফেশন পেয়েছি। সবটাই ওই প্রেম নিবেদন গোছের। ভেবেছিলাম নিজের ভাল মন্দ জানতে পারব, লোকে ক্রিটিসাইজ করবে, তবে সেগুলো কিছুই পাইনি। এ ক্ষেত্রে হ্যাকিং-এর যে সম্ভবনার কথা বলা হচ্ছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে বলব অ্যাপ ইনস্টলের সময় কোন কোন অ্যাকসেস পার্মিশন নিচ্ছে সেটা খেয়াল রাখতে হয়। আমি সেগুলো দেখেই ডাউনলোড করেছি, ফোন স্টোরেজ, কনট্যাক্ট কোনওটাই অ্যাকসেস নেই। ইনফর্মেশন বলতে নাম আর মেল আইডি ছাড়া কিছুই লাগছে না। তাই নিরাপদ। তবে ইমেলে কিছু স্প্যাম মেসেজ ঢোকার সম্ভবনা থাকতে পারে।"

publive-image অ্যাপ ডাউনলোডের সময় টার্ন অফ করে রাখুন এই অপশনগুলো।

আরও পড়ুন: সম্পর্কে হাজারো জটিলতা? এই দিকগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো?

এভাবেই কখনও হ্যাশ ট্যাগ মি টু তো কখনও মার্কড সেফ ইন স্টর্ম। প্যাড ম্যান চ্যালেঞ্জ থেকে স্টুলিশ সারাহা-ই সাহারা দিয়ে চলেছে নেটিজেনদের। আসলে সবটাই হুজুগ মাত্র। অস্বস্তির ব্রেকিং নিউজ, বসের কচকচানি থেকে পঞ্চায়েতের ভোট গননা বা ভীড় বাসের গুঁতোগুঁতির বাইরেও হুজুগে মাততে ভালবাসেন অনেকেই। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলে স্যোশাল ট্রেন্ডও। তাই আজকাল ডাক বাক্সে উড়ো চিঠি না এলেও ফেসবুক টাইমলাইনে কিন্তু উড়ো চিঠির ক্রেজ কম নয় একেবারেই।

publive-image

মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট গার্গী দাসগুপ্তের কথায়, "স্যোশাল মিডিয়া ব্যাপারটাই কিন্তু বেশ জটিল। এর পজিটিভ নেগেটিভ দুটো দিকই রয়েছে, তবে নেগেটিভ দিকটাই বেশি জাঁকিয়ে বসছে। আদতে আমরা একটা ফেক লাইফকে ভীষণ আপন করে নিয়েছি ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপের এই যুগে। পাশাপাশি লাইক কমেন্ট, ফ্রেন্ডলিস্ট এসব নিয়েই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। ইদানিং ব্যক্তিগত জীবন ভীষণ খোলামেলা হয়েছে, ঐ সামাজিক জগৎটাকেই জাহির করছি সারাক্ষণ। আর এই উড়ো চিঠি গোছের ট্রেন্ডগুলো আরও বেশি ক্ষতি করে আমাদের মানসিক অবস্থার। আমরা এসব করে মজা পাই ঠিকই, কিন্তু কখন যে এই মজাটা দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেটাই আর খেয়াল করে ওঠা হয়না। বর্তমান প্রজন্ম নিত্য নতুন উত্তেজনার বিষয় খুঁজে চলেছে। আর এই ধরণের অ্যাপ এবং গেমস সেগুলোকে চরমে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিই করছে আমাদের। এটাকে একধরনের ইমোশনাল অ্যাড্রিনালিন সাইকেল বলা যেতে পারে। কে আমাকে এই মেসেজ পাঠালো ইত্যাদি নিয়ে একটা সাংঘাতিক আলোড়ন তৈরি হচ্ছে, সারাদিন ভেবে চলছি সেই জগৎ নিয়ে, কিন্তু এই বিষয়গুলোকে যে একটা সীমার পর গিয়ে ফেলে দিতে হবে সেটাই আমরা ভুলে যাই। তাই এবার বোধহয় সত্যিই সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।"

Advertisment