বিভাজন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করে তোলার জন্য আজকের দুনিয়ায় হাজার উপকরণ উপস্থিত। ভাষা আলাদা? ওরা আলাদা। ধর্ম আলাদা বুঝি? ওরা তাহলে আরও আলাদা। বিপদে পড়লে কাকে স্মরণ করে? সকালের প্রার্থনায় কাকে ডাকে? খিদে পেলে কী খায়? তেষ্টা পেলে কোন ভাষায় জল চায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর 'আমার' মতো না হলেই মানুষগুলো 'ওরা' হয়ে যায়। এই আমাদের বিশ্বায়নের পৃথিবী। যত কাছে আসছি, তার চেয়ে অনেক বেশি দূরে সরছি একে অন্যের থেকে। এইরকম অন্ধকার সময়েই কলকাতার বুকে বেশ কিছু বছর ধরে হয়ে আসছে বিশ্ব সুরের বন্দনা।
হাঙ্গেরি থেকে আসা শিল্পী
২০১১ সাল থেকে পথ চলা শুরু 'সুর জাহান'। আগে অবশ্য নাম ছিল 'সুফি সূত্র'। মোহরকুঞ্জে আগামী ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে 'সুর জাহান'। আক্ষরিক অর্থেই জাহান বটে। এখনও পর্যন্ত ২৭টি মুলুক থেকে শিল্পীরা এসেছেন মহানগরে। আফঘানিস্থান, আজারবাইজান, মিশর, পোল্যান্ড, ব্রাজিল, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগালের মতো দেশ থেকে শিল্পীরা আসেন সুরের টানে। এবারেও ৫ টি দেশ থেকে সংগীতশিল্পীরা আসবেন। ওঁদের কেউ হয়তো আমাদের কথা বোঝেন না, আমাদের মত পোশাক পরেন না, খাদ্যাভ্যাস আলাদা, ধর্ম আলাদা, আর এই অগুনতি রকম 'আলাদা'র মাঝে একটা ভাষাই আমাদের এক করে রাখতে পারে- সুরেরই ভাষা, ছন্দেরই ভাষা'। এক পৃথিবী 'অন্যরকম'-এর মাঝে ওই একটু খানি সুরই তো পারে ফুটফুটে আফগান মেয়েটির পাশে মার্কিন এক মা'কে বসিয়ে রাখতে।
সুরজাহান সবাইকে নিয়ে পথ চলার কথা বলে। ঘরের পাশের কচি মুখটার যতটা মায়া ভরা আছে বুকে, মরক্কোর ওই ময়লা পোশাকের কিশোরের জন্যই যেন ততোটাই থাকে, ব্যাস- এইটুকুই চাওয়া সুরজাহানের। হানাহানি-রক্তপাতের দিনগুলোয় সুর দিয়ে যদি একটুও পালটে ফেলা যায় দিন, তার জন্য চেষ্টার খামতি রাখেন না উদ্যোক্তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থা 'বাংলা নাটক ডট কম' বিশ্বাস করে সুরের জগতে সবার সমান অধিকার। এই বিশ্বাস থেকেই তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের কোনো প্রবেশমূল্য নেই।
মিশর থেকে এর আগে যারা এসেছিলেন
উদ্যোক্তাদের অন্যতম রঞ্জন সেন। বললেন, "এই অনুষ্ঠান মূলত শান্তির জন্য। এখানে দর্শক এবং শ্রোতার মধ্যে কোনো আড়াল থাকে না। দেশ বিদেশের সংগীত শিল্পীদের পাশাপাশি বাংলার দেশজ গানকেও তুলে ধরার চেষ্টা করি আমরা। কলকাতা শহরের শ্রোতাদের সামনে বিশ্ব সংগীতের দরজা খুলে দিতে পেরে খুব ভাল লাগে। সুরের আর সংস্কৃতির বিনিময় না হলে সভ্যতাই থমকে যেত"।