Vivekananda's Speech: শিকাগোতে স্বামী বিবেকানন্দর নামে রাস্তা, ১৮৯৩-এর বক্তৃতাই বদলে দিয়েছিল ইতিহাস

Vivekananda's Speech: ১৮৯৩ সালের শিকাগো ধর্ম সংসদে স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত বক্তৃতা ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই ভাষণের স্মৃতি আজও ধরে রেখেছে আমেরিকা।

Vivekananda's Speech: ১৮৯৩ সালের শিকাগো ধর্ম সংসদে স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত বক্তৃতা ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই ভাষণের স্মৃতি আজও ধরে রেখেছে আমেরিকা।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Swami Vivekananda Chicago

Vivekananda's Speech: শিকাগোর ধর্মসভায় স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তা।

Swami Vivekananda and Chicago Speech: আমেরিকার শিকাগো শহরে আছে স্বামী বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত রাস্তা। রাস্তাটির নাম, 'স্বামী বিবেকানন্দ ওয়ে'। ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বিশ্ব ধর্ম সংসদে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। যে জায়গায় তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেই জায়গাটির নাম, 'পার্মানেন্ট মেমোরিয়াল আর্ট প্যালেস'। যার বর্তমান নাম, 'আর্ট ইনস্টিটিউট অফ শিকাগো'। তার পাশেই রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত রাস্তাটি।

Advertisment

হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি

হিন্দু ধর্মের মুখপাত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে স্বামীজি ওই সভায় ধর্মীয় সহনশীলতার পক্ষে এবং ধর্মান্ধতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। যা দারুণভাবে দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। উপস্থিত হাজারো শ্রোতা বিবেকানন্দের ভাষণে উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছিলেন। যে করতালি পুরো দুই মিনিট ধরে চলেছিল। এই সভা বিশ্ববাসীর কাছে হিন্দু ধর্মকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল।

আরও পড়ুন- অগ্নিযুগের বিপ্লবী! বিবাদী বাগের বি তাঁর নামের আদ্যক্ষর থেকেই নেওয়া

Advertisment

ওই সভায় স্বামীজি বলেছিলেন, 'আমার আমেরিকার ভাই ও বোনেরা, আপনাদের উষ্ণ ও আন্তরিক অভ্যর্থনায় সাড়া দিতে গিয়ে আমার হৃদয় অবর্ণনীয় আনন্দে ভরে উঠেছে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভিক্ষু সম্প্রদায়ের নামে, ধর্মের জননীর নামে এবং সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের লক্ষ লক্ষ হিন্দুর নামে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

আরও পড়ুন- এভাবে ফ্রিজে রসুন রাখুন, সহজে নষ্ট হবে না, দীর্ঘদিন টাটকা থাকবে!

এই মঞ্চের কিছু বক্তাকে ধন্যবাদ, যাঁরা প্রাচ্যের প্রতিনিধিদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, দূর-দূরান্ত থেকে আগত এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন দেশে সহনশীলতার ধারণা বহন করার গৌরব অর্জন করতে পারেন। আমি এমন একটি ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে গর্বিত যা বিশ্বকে সহনশীলতা এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা উভয়ই শিখিয়েছে। আমরা কেবল সর্বজনীন সহনশীলতায় বিশ্বাস করি না, বরং আমরা সকল ধর্মকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করি। আমি এমন একটি জাতির্ভুক্ত হতে পেরে গর্বিত, যারা পৃথিবীর সকল ধর্মের নির্যাতিত এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। আমি আপনাকে গর্বের সাথে বলতে চাই যে আমরা আমাদের বুকে ইজরায়েলিয়দের সবচেয়ে শুদ্ধতম অবশিষ্টাংশকে একত্রিত করেছি, তাঁরা দক্ষিণ ভারতে এসেছিলেন এবং ঠিক সেই বছরেই আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁদের পবিত্র মন্দির রোমান অত্যাচারে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। আমি সেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে গর্বিত যা মহান জরথুস্ট্রিয়ান জাতির অবশিষ্টাংশকে আশ্রয় দিয়েছে এবং এখনও লালন-পালন করছে। ভাইয়েরা, আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে একটি স্তোত্রের কয়েকটি পংক্তি উদ্ধৃত করব, যা আমার মনে আছে আমার শৈশবকাল থেকে বারবার উচ্চারিত হয়ে আসছে, যা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ উচ্চারণ করে: 'বিভিন্ন স্রোত, যার উৎস বিভিন্ন জায়গায়, সমুদ্রে মিশে যায়, তেমনি হে প্রভু, মানুষ বিভিন্ন প্রবণতার মধ্য দিয়ে যে বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে, সেগুলো, বিভিন্ন, আঁকাবাঁকা বা সোজা, সবই তোমার কাছে নিয়ে যায়।'

আরও পড়ুন- পুজো স্পেশাল! সহজে কম সময়ে বাসন্তী পোলাওয়ের সঙ্গে বানান চিকেন কষা

বর্তমান সম্মেলন, যা সর্বকালের সবচেয়ে পবিত্র সমাবেশগুলির মধ্যে একটি, নিজেই গীতায় প্রচারিত এই বিস্ময়কর মতবাদের একটি প্রতিফলন, জগতের কাছে একটি ঘোষণা, 'যে কেউ আমার কাছে আসে, যে কোনও রূপে হোক না কেন, আমি তাঁর কাছে পৌঁছই। সমস্ত মানুষ সেই পথ দিয়ে সংগ্রাম করছে যা শেষ পর্যন্ত আমার কাছে নিয়ে আসে।' সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামি এবং এর ভয়াবহ বংশধর, ধর্মান্ধতা, দীর্ঘকাল ধরে এই সুন্দর পৃথিবীকে দখল করে আছে। তারা পৃথিবীকে হিংসায় ভরে দিয়েছে, প্রায়শই মানুষের রক্তে ভিজিয়েছে, সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে এবং সমগ্র জাতিকে হতাশায় ফেলেছে। যদি এই ভয়ঙ্কর রাক্ষস না থাকত, তাহলে মানব সমাজ এখনকার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হত। কিন্তু তাদের সময় এসেছে, এবং আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে এই সম্মেলনের সম্মানে আজ সকালে যে ঘণ্টা বাজানো হয়েছে তা সমস্ত ধর্মান্ধতার, তরবারি বা কলমের মাধ্যমে সমস্ত নির্যাতনের এবং একই লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে এগিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্ত অনৈতিক অনুভূতির মৃত্যুঘণ্টা হতে পারে।'

আরও পড়ুন- মেহেন্দি লাগবে না, এই বীজগুলো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে লাগান, চুল কালো হয়ে যাবে

১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে ছয়টি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে, উদ্বোধনী ভাষণটিই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১৮৮৯ সালে শিকাগোর একজন আইনজীবী চার্লস ক্যারল বনি, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৪০০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য আসন্ন ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশনের অংশ হিসেবে এই বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সমাবেশ আহ্বান করেছিলেন। 

ধর্ম সংসদে, আয়োজক কমিটির সভাপতি জন হেনরি ব্যারোস গর্ব করে বলেছিলেন যে আমেরিকার মত একটি সমৃদ্ধ খ্রিস্টান দেশই কেবল এই বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোয় পরপর দুটি বক্তৃতায় (১৫ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩) সেই কথার জবাব দিয়েছিলেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ভারতে বহু আগে সম্রাট অশোক এমন ধর্মসভার আয়োজন করেছেন। পাশাপাশি, আকবরও বারবার এমন সভা আয়োজন করেছিলেন। 

Swami Vivekananda