কলকাতার অনতিদূরে ইছামতী নদীর তীরে একটি অখ্যাত গ্রাম মঙ্গলগঞ্জ। গ্রাফিক্স- প্রত্যুুষ রায়
ছোটবেলায় ঠাকুমার কোলে শুয়ে শাকচুন্নি, মামদো, স্কন্ধকাটা, ব্রহ্মদৈত্যদের নানান কাণ্ডকারখানার কথা শুনেছে কম বেশি সকলেই। কিন্তু যদি তাঁদের সান্নিধ্যে এক রাত কাটানোর সুযোগ হয়? গা ছমছমে হলেও ব্যাপারটি কিন্তু নেহাত মন্দ নয়!
Advertisment
কলকাতার অনতিদূরে ইছামতী নদীর তীরে একটি অখ্যাত গ্রাম মঙ্গলগঞ্জ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বনগাঁর কাছে অবস্থিত এই গ্রামটি বেশ মনোমুগ্ধকর। গাছ-গাছালি, বাঁশ বাগান ও চাষের ক্ষেতে ঘেরা গ্রামটিতেই রয়েছে একটি ভাঙা হাভেলি। স্থানীয়দের কাছে যা নীলকুঠি হিসেবে বিখ্যাত… থুড়ি অখ্যাত!
বাড়িটির ছাদ ভেঙে পড়েছে, কিছু দেওয়াল ধসে এমনভাবে হাঁ হয়ে গিয়েছে যে দেওয়ালের ইঁটগুলি দেখলে মনে হয় বুঝি জীর্ণকায় এক বৃদ্ধ ভাঙা দাঁত নিয়ে হাসছে। এই বাড়িটির ছায়া অবশ্য স্থানীয়রা সন্ধের পর ভুলেও মাড়ান না। প্রচলিত জনশ্রুতি এই যে, এক নীলকর সাহেবের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে চাষিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এবং এক বিদ্রোহী আততায়ীর হতে নিহত হন সেই নীলকর সাহেব। এবং তখন থেকেই এই বাড়িতে তাঁর অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় বলে মত স্থানীয়দের। তাই এটি কাটা সাহেবের কুঠি নামেও পরিচিত।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বনগাঁর কাছে অবস্থিত এই গ্রামটি বেশ মনোমুগ্ধকর।
Advertisment
অবশ্য এই ইতিহাসের সত্যতা যাচাই করার জো নেই। তবে সত্যি-মিথ্যে যাই হোক না কেন, সন্ধ্যার পর এই চত্বরটি বেশ গা ছমছমে হয়ে ওঠে। এই নীলকুঠির লাগোয়া একটি স্কুল রয়েছে, আর বিপরীতেই বয়ে চলেছে ইছামতী নদী। সকালে স্কুলের বাচ্চাদের ও নদীতে নৌকাবিহার করতে আসা পর্যটকদের ভিড়ে জায়গাটি জমজমাট হয়ে থাকলেও, সন্ধে নামলে সেইসব কোলাহল ম্লান হয়ে যায়। স্ট্রিটলাইট বিহীন একটি রাস্তার উপর অন্ধকারের মধ্যে দৈত্যকায় বাড়িটি হানাবাড়ির মতো পড়ে থাকে একা, নিঃস্তব্ধ হয়ে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ও থ্রিল-প্রেমী হলে, আপনি রাতেও একবার ঢুঁ মেরে যেতে পারেন এখানে। তার জন্য থাকার ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত রয়েছে অনতিদূরেই।
মঙ্গলগঞ্জে থাকবেন কোথায়?
নীলকুঠি ও ইছামতী নদীর পাড় থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বেই রয়েছে মঙ্গলগঞ্জ ইজফিজো হন্টেড ক্যাম্প (izifiso haunted camp)। এইখানে দুটি ঘর সমেত রয়েছে আটটি ক্যাম্প। ক্যাম্পগুলি বেশ বড় এবং প্রতিটি ক্যাম্পে দুজন থাকতে পারে। ক্যাম্পে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগপোযোগী ওয়াইফাই সংযোগও। ক্যাম্পে মাথাপিছু থাকার খরচ ১,৩০০ টাকা এবং ঘরে মাথাপিছু থাকার খরচ ১,৪০০ টাকা। উভয় দামেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ব্রেকফাস্ট, দুপুর, রাতের খাবার ও সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ার সহযোগে আড্ডার বন্দোবস্ত।
নীলকুঠি ও ইছামতী নদীর পাড় থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বেই রয়েছে মঙ্গলগঞ্জ ইজফিজো হন্টেড ক্যাম্প
এই ক্যাম্পে প্রতিটি ঘর ও তাঁবু নামাঙ্কিত রয়েছে বাংলা সাহিত্যের জগৎ উজ্জ্বল করে থাকা ভুত প্রেতেদের নামে। যেমন মেছো, নিশি, শাকচুন্নি, মামদো, ব্রহ্মদৈত্য, শিকলবুড়ি, পিশাচ ইত্যাদি। ইজিফিসো–এর ওয়েবসাইট থেকেই সেরে নিতে পারেন অগ্রিম বুকিং।
মঙ্গলগঞ্জ পৌঁছবেন কী ভাবে?
কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মঙ্গলগঞ্জ সাধারণত বাইক আরোহীদের ভীষণ প্রিয়। আপনার যদি বাইক বা গাড়ি থাকে, তবে গুগল ম্যাপস ধরেই সোজা পৌঁছে যেতে পারেন মঙ্গলগঞ্জ। যদি গণ পরিবহনে যেতে চান, তবে শিয়ালদহ থেকে মেন শাখার ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন বনগাঁ অথবা চাকদহ স্টেশনে। উভয় স্থান থেকেই নাটাবেড়িয়ার উদ্দেশ্যে বাস সহজলভ্য। বাসে করে সোজা পৌঁছে যান নাটাবেড়িয়া। সেখান থেকে হাঁটা পথেই পৌঁছে যেতে পারেন। মঙ্গলগঞ্জ ইজিফিসো ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্পে।
এই ক্যাম্পে প্রতিটি ঘর ও তাঁবু নামাঙ্কিত রয়েছে বাংলা সাহিত্যের জগৎ উজ্জ্বল করে থাকা ভুত প্রেতেদের নামে।
কী করবেন, কোথায় ঘুরবেন?
দুপুরের মধ্যে মঙ্গলগঞ্জ পৌঁছে টুক করে সেরে নিতে পারেন এঁকে বেঁকে বয়ে চলা ইছামতী নদীতে নৌকা বিহার। তারপর এক ফাঁকে খেয়া পাড় করে পৌঁছে যান বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে, সেখানে মিশুকে হরিণদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ সেরে সন্ধ্যে নামার আগে ফিরে আসুন মঙ্গলগঞ্জ। সন্ধ্যেবেলা গা ছমছমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পৌঁছে যান নীলকুঠিতে। সেখানে সাহেবের দেখা পেলে, অবশ্যই একবার হ্যান্ডশেক করে নিতে ভুলবেন না যেন!
মঙ্গলগঞ্জ পৌঁছে টুক করে সেরে নিতে পারেন এঁকে বেঁকে বয়ে চলা ইছামতী নদীতে নৌকা বিহার।
তবে আর দেরি কেন, এক্ষুনি বুকিং সেরে বেরিয়ে পড়ুন মঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে, আর আপনাদের গা ছমছমে অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।