আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অবদানের শেষ নেই। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া-জনিত সংক্রমণ দূর করতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হয়। তবে তা নিয়ম মেনেই খাওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার অভ্যাস থাকলে জেনে নিন, কখন কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাবেন। অ্যান্টিবায়োটিং ওষুধ খাওয়া নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ডাঃ রাজা ভট্টাচার্য।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কী?
অ্যান্টিবায়োটিক অর্থাৎ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ। এই ধরনের ওষুধ মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করে, পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি এবং তার কলোনিগুলিতে বংশবিস্তার রোধ করা। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত ইনফেকশনই প্রতিরোধ করে।
আরও পড়ুন: কোমরে ব্যথা, ঝিমঝিম ভাব? ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন নয় তো?
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে কোন কোন বিষয় জেনে রাখা উচিত?
ওষুধ দেওয়ার আগে জেনে নেওয়া উচিত, সেই ওষুধের কোনো বিক্রিয়া (রিয়্যাকশন) বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। ওষুধ দেওয়ার আগে স্কিন টেস্ট করে নেওয়া উচিত। ইন্ট্রাভেনাস বা ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেওয়ার আগে স্কিনে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। যদি রিয়্যাকশন দেখা দেয় তাহলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যথেচ্ছ পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। রোগীর লিভার ও কিডনির অবস্থা বুঝে তবেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত। অ্যান্টিবায়োটিক খেলে যদি মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে প্রিপোবাইটিকা দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: কী করলে কম ভুগতে হবে অস্টিও-আর্থরাইটিস রোগে?
কোন রোগে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত?
ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ মুক্ত করতেই মূলত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত। যে কোনো ইনফেকশনের সময় যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি ও তার কলোনির বংশবিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এবং সেপটিসিমিয়া, এই চারটি রোগে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: চুল-ত্বক উজ্জ্বল রাখতে মাখুন ভাতের মাড়, হাতে নাতে ফল পাবেন
জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত?
জ্বর হলে আগে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। কারণ পরবর্তীকালে রক্ত পরীক্ষা করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় না। তার ফলে চিকিৎসায় দেরি হতে পারে। জ্বর হলে প্রথমে তার কারণ খোঁজা উচিত। বয়স্কদের জ্বর হলে অবশ্য তাঁদের ক্ষেত্রে এখন প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেওয়া হয়। কারণ পরবর্তীকালে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন: ওষুধ ছাড়াই কী ভাবে কমবে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা?
অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ম মেনে না খেলে কী হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক বেশি খাওয়াও ক্ষতিকারক, পাশাপাশি কম খাওয়াও উচিত নয়। কম খেলে ব্যাকটেরিয়া যদি সম্পূর্ণ ভাবে না মরে যায়, তাতে ফের সংক্রমণ দেখা দেবে। বেশি খেলে ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্রে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলিও মরে যায়। যার ফলে বেশ কিছু খারাপ রোগ দেখা দেয়। একইসঙ্গে অপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি তখন বৃদ্ধি পেতে থাকে।