ভারতীয় শৈব সমাজে যেমন আদি শংকরাচার্য। তেমনই বৈষ্ণব সমাজে ভগবানের প্রতিরূপ হিসেবে ধরা হয় রামানুজাচার্যকে। আদি শংকরাচার্যকে মনে করা হত ভগবান শিবের প্রতিরূপ। আর, রামানুজাচার্য ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর প্রতিরূপ। আদি শংকরাচার্য ভারতের চার প্রান্তে চারটি মঠ তৈরি করে গিয়েছেন। সেই মঠগুলোর প্রধানদের হিন্দুরা আদি শংকরাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করেন। তাঁদের শংকরাচার্য বলেই মনে করা হয়। পদাধিকার বলে শংকরাচার্য বলেই ডাকা হয়।
আর, রামানুজাচার্যের সাধনক্ষেত্র ছিল তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির শ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দির বা তিরুবরঙ্গম। শ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দির ১৫৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। রঙ্গনাথস্বামী ভগবান বিষ্ণুরই রূপ। এখানে রয়েছে ৫০টি ছোট মন্দিরও। এছাড়াও আছে ২১টি মিনার ও ৩৯টি নাটমন্দির। পাশাপাশি রয়েছে ১,০০০ স্তম্ভের একটি হলঘর। যা গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। সব মিলিয়ে যেন একটা মন্দিরমালা।
আরও পড়ুন- অম্বুবাচীতেও খোলা তারাপীঠ মন্দির, চলছে পুজোপাঠ, জানুন এর রহস্য
এই মন্দিরের স্থাপত্যে রয়েছে দ্রাবিড়ীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া। যার বর্ণনা মধ্যযুগের তামিল সাহিত্যেও পাওয়া যায়। কাবেরী নদীর মধ্যে এক দ্বীপে এই মন্দির। মন্দিরের প্রধান ফটকের নাম রাজগোপুরম। এর উচ্চতা ২৩৭ ফুট। এখানে এক বার্ষিক উৎসব হয়। সেই উৎসব চলে টানা ২১ দিন। আর, ওই ২১ দিনের উৎসবে গোটা বিশ্ব থেকে ভক্তরা ভিড় করেন। সেই সময় প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সমাগম হয় এই মন্দিরে। মন্দিরে মধ্যেই আছে একাধিক জলাধারও।
রামানুজাচার্যের নামেও এখানে একটি মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরেই রাখা আছে রামানুজাচার্যের মমি করা দেহ। যার সামনে প্রার্থনা এবং পুজোও করেন ভক্তরা। রামানুজাচার্য ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে পেরুমবুদুরে জন্মেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন। ভক্তদের বিশ্বাস রামানুজাচার্য ছিলেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর অবতার। ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশেই নাকি তাঁর দেহটি সংরক্ষণ করে মূর্তির আকার দেওয়া হয়েছে। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। হাজার বছরের পুরোনা দেহটি বসা অবস্থায় আছে। সকলেই সেটি দেখতে পারেন।