শক্তিপীঠ বাংলা। এখানে ইতিউতি, বিভিন্ন জায়গায় শক্তিসাধনার চল আছে। বাংলার যে শক্তিসাধকরা বর্তমান সময়ের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ, তাঁদের অন্যতম বামাক্ষ্যাপা (বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়) বা বামদেব। তিনি ছিলেন বাকসিদ্ধ অঘোরি সাধক। বামাক্ষ্যাপার জন্ম হয়েছিল ১২৪৪ বঙ্গাব্দে, বীরভূমে। তাঁর বাবার নাম ছিল সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়। বামাচরণ ছোট থেকেই দেবী তারার ভক্ত ছিলেন। তাঁর দীক্ষাগুরু ছিলেন কৈলাাসপতি ব্রহ্মচারী।
তারাপীঠ মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটই ছিল তাঁর সাধনস্থল। শোনা যায়, দেবীর নির্দেশেই তিনি গেরুয়া বসন ছেড়ে রক্তবস্ত্র ধারণ করেছিলেন। কোনও অঘটন হওয়ার আগেই অনায়াসে বুঝতে পারতেন। তারাপীঠ-সহ বীরভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল নাটোরের রাজবাড়ির জমির অংশ। নাটোরের মহারানি রানি ভবানীর নির্দেশে তারাপীঠে আগে বামাক্ষ্যাপাকে ভোজন করানো হত। তারপর দেবীকে ভোজন করানোর চল শুরু হয়েছিল।
তারাপীঠে দেবীর আরাধনা হয় তন্ত্রমতে। প্রতিবারের মত এবারও দীপাবলি ও কালীপুজোকে কেন্দ্র করে আলোর মালায় সেজে উঠেছে তারাপীঠ মন্দির। অন্যবারের মতই বিপুল সংখ্যায় পুণ্যার্থীরা ভিড় করেছেন মন্দির চত্বরে। কার্তিক অমাবস্যায় সকালে স্নানের পর নিয়মমাফিক দেবীর শিলাব্রহ্মময়ী মূর্তিকে সাজিয়ে তোলা হয় রাজবেশে। চুনরি পরিয়ে দেবীকে সাজানো হয়। এরপর পঞ্চ উপাচারে হয় মঙ্গলা আরতি এবং নিত্যপুজো।
আরও পড়ুন- কুরূপা-ঈর্ষা-দুর্ভাগ্যের দেবী অলক্ষ্মী, তাও দীপান্বিতা অমাবস্যা পুজো পান! কেন?
দেবীকে নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ, মিষ্টি, ফল ও মিছরি ভেজানো জল। দেবীকে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচমিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। এখানে অন্নভোগের সঙ্গে থাকে পোড়া শোলমাছ মাখা। দীপান্বিতা অমাবস্যায় হয় বিশেষ সন্ধ্যা আরতি। হয় নিশি পুজোর। পুজো শেষে দেবীকে নিবেদন করা হয় লুচি, পায়েস, সুজি-সহ শীতল ভোগ।