ফের একটি মহালয়ার মুখে বাঙালি। কী এই মহালয়া? তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। চলুন, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মহালয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মহালয়া কী
মহালয়া শব্দটি এসেছে মহালয় থেকে। যার অর্থ বৃহৎ আলয় বা পরমাত্মা। ব্যাকরণগত দিক থেকে বহুব্রীহি সমাস- মহান আলয় যাহা/যাহাতে। মহালয়ের স্ত্রীলিঙ্গ মহালয়া। মহালয় একটি তিথি। এই তিথি আবার সংস্কৃতি স্ত্রীলিঙ্গ। তাই বিশেষণ হিসেবে শব্দটি হয়েছে মহালয়া। যা আসলে শারদীয়া দুর্গাপুজোর আগের অমাবস্যা। অথবা, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা। এককথায় সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষ।
শাস্ত্রে মহালয়া
স্কন্দপুরাণে মহালয়া শব্দটি পাওয়া গিয়েছে। অমৃত থেকে দৈত্যদের বঞ্চিত করতে ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করেছিলেন। তাঁর রূপের ছটায় অসুররা সম্মোহিত হয়েছিলেন। দৈত্যরাজ বলি তাঁকে বলেন, 'দেবীর মহৎ আলয়ে অনেক নিশ্চিত বোধ করছি আমরা।' দেবতারাও দেবী মোহিনীরূপী বিষ্ণুকে আরাধনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই মোহিনীরূপী বিষ্ণু যেহুতু দেবতাদের অমরত্বের মাধ্যমে রক্ষা করেন, তাই তিনি হয়ে ওঠেন দেবতাদের মহৎ আলয় বা আশ্রয়স্থল।
আরও পড়ুন- ভক্তদের পরম আশ্রয়, তিনিই দুর্গা আবার তিনিই কালী, সতীপীঠের দেবী নলাটেশ্বরী
পিতৃপক্ষ কী
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যখন সূর্য বা রবিগ্রহ কন্যারাশিস্থ হয়, তখন তাকে পিতৃপক্ষ বলা হয়। তিথির সময়ের হ্রাস এবং বৃদ্ধি, পাশাপাশি মলমাসজনিত কারণে মহালয়ার অমাবস্যা তিথিটিও পিছোতে বা এগোতে পারে। বাংলার একই মাসে যদি দুটি অমাবস্যা পড়ে, তাহলে মল মাসের সূচনা হয়। এই সময় হিন্দুদের শুভক্রিয়া নিষিদ্ধ। পূজাও পিছিয়ে যায়।
মহালয়ার সঙ্গে তর্পণের সম্পর্ক
কথিত আছে, প্রায় ১৪,৪৩৯ বছর আগে ১৬ ভাদ্রের অমাবস্যা তিথিতে এক মহা-লয় বা মহাপ্রলয় হয়েছিল। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ স্থলভাগ জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বাঁচার জন্য মানুষ উঁচু এলাকায় সরে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আর্যঋষিগণ এই মহাপ্রলয় উপলক্ষে মঘা নক্ষত্রে বিষুবকালীন সূর্যকে পিতৃগণ নামে স্তব করেন। নানা অর্ঘ্য দিয়ে সূর্যের উপাসনা চালু হয়। যে কোনও অমাবস্যায় তর্পণের বিধির ব্যবস্থা নেই। শাস্ত্রে কেবলমাত্র পিতৃপক্ষে পক্ষকালব্যাপী তর্পণের কথা বলা হয়েছে। আবার তর্পণ বা তর্পণ-শ্রাদ্ধ পক্ষকালব্যাপী হলেও মহালয়া তিথিটিই তার মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত সময়। এই রবিবার তর্পণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সকাল ৬টা ২৩ থেকে সকাল ৮টা ৪১।