শহর কলকাতা। কালীতীর্থ এই শহরে ছড়িয়ে কত না, জানা-অজানা মন্দির। তার মধ্যে আবার যে মন্দিরগুলোর কথা ভক্তরা জানেন, সেখানে ভিড় লেগেই থাকে। নিত্যদিনের নানা অসুবিধা ওই সব মন্দিরে এসে দেবীকে জানান ভক্তরা। পারিবারিক হোক বা কর্মস্থলের সমস্যা, দেবীর কাছে তাঁরা পরিত্রাণ চান। বিশেষ করে শনি-মঙ্গলবারে তো ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। কেউ নিয়মিত এসে ওই দিনগুলোয় দক্ষিণা দিয়ে পুজো দিয়ে যান। কেউ আবার স্রেফ দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম সেরে মনস্কামনা জানিয়েই ফিরে যান।
শহরের উত্তর হোক বা দক্ষিণ, পূর্ব হোক বা পশ্চিম, এমনটাই চলে বছরভর। বিশেষ অনুষ্ঠান বা তিথিতে আবার বিখ্যাত মন্দিরগুলোয় ভিড় ভক্তদের উপচে পড়ে। অনেকেই চান, একবারের জন্য হলেও দেবী দর্শন করতে। যেন তাতেই শান্তি, তাতেই সন্তুষ্টি। সমস্যা থেকে বাঁচায় উপায় যেন ওইটুকু দর্শনেই মিলে যায়। কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু, তর্কে বহুদূর। একে অনেকটা স্রেফ এই প্রবাদের সঙ্গেই তুলনা করা যায়।
কলকাতার সেই অতি জাগ্রত মন্দির রয়েছে বিখ্যাত কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে একটু দূরে বিধান সরণিতে। এটা সিদ্ধেশ্বরী কালীর মন্দির। জায়গাটি ঠনঠনিয়া নামে পরিচিত। তাই একে ঠনঠনিয়া কালীমন্দির বলে। কথিত আছে, ১৭০৩ সালে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক মাটি দিয়ে এই কালীমূর্তিটি তৈরি করেছিলেন। তিনি এই মূর্তির পুজো করতেন। তখন থেকে এই দেবীর খ্যাতি ছড়ায় ভক্তদের মধ্যে।
আরও পড়ুন- এমন সুযোগ হাতছাড়া করা অনুচিত, সহজেই পূরণ করুন নিজের মনস্কামনা
তার ঠিক একশো বছর পর ১৮০৬ সালে শংকর ঘোষ নামে এক ধনী ব্যক্তি এই দেবীমূর্তিকে ঘিরে মন্দির বানিয়ে দেন। সঙ্গে, পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দিরও বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। গ্রহণ করেছিলেন নিত্যপূজার ব্যয়ভার। তারপর থেকে এই মন্দিরে উপচে পড়তে থাকে ভক্তদের ভিড়। প্রতিবছর এখানে দেবীমূর্তির সংস্কার হয়। কার্তিক অমাবস্যায় দীপান্বিতা কালী, মাঘে রটন্তী কালী ও জ্যৈষ্ঠয় ফলহারিণী কালীপুজো বেশ বড় আকারে এখানে হয়। ভক্তরা অনেকেই আসছেন বংশপরম্পরায়।
মন্দির খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। আবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। খুব কম সময়ই হয়, তখন মন্দির প্রাঙ্গণ ফাঁকা থাকে। না-হলে, সবসময় দেখা যায়, ভক্তদের ভিড়ে ভিড়াক্কার। ভক্তদের এই বিশ্বাসই বলে দেয়, ঠিক কতটা জাগ্রত ঠনঠনিয়া কালীমন্দির।