পূণ্যভূমি বাংলা। এখানে নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মন্দির। যেসব মন্দিরে পুজোপাঠে পূরণ হয় মনস্কামনা। এমনই এক তীর্থস্থান রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। যার অলৌকিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস ২৫০ বছর আগে থেকে মানুষের সামনে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
Advertisment
সময়টা ছিল বাংলায় বর্গি আক্রমণের কাল, ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ। বাংলার নবাব ছিলেন আলিবর্দি খান। সেই সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বর্তমান বিষ্ণুপুর থানার বাখরাহাটের কাছে ঝিকুরবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা বর্গিহানা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ছিলেন কৃষিজীবী। এই গ্রামটি একসময় সুতানুটি-গোবিন্দপুরের জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের তালুকের অংশ ছিল। এই গ্রামে জঙ্গলের মধ্যে ছিল এক শ্মশান।
কথিত আছে, বর্গি আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্মশান সংলগ্ন গভীর জঙ্গলে। একদিন এক সাধু সেই জঙ্গল পেরিয়ে যাওয়ার সময় এই শ্মশানে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীদের মুক্তিদাতা। জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন এসে তাঁর কাছে নানা অসুবিধা ও অসুস্থতার কথা বলতেন। আর, সেই সাধু তার অলৌকিক শক্তিবলে সেই সমস্ত সমস্যা মিটিয়েও দিতেন।
হঠাৎই এক চৈত্রমাসে নীলগাজনের দিনে সাধু মারা যান। গ্রামবাসীরা তাঁর দেহ না-পুড়িয়ে শ্মশানেই সমাধিস্থ করেন। যেখানে তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়, সেখানে জন্ম নেয় একটি অশ্বত্থ গাছ। সেই গাছকেই বর্তমানে দেবতাজ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। কথিত আছে সেই গাছে চিঠির আকারে মনস্কামনা জানালে, তা পূরণ হয়। ১৯৭৮ সালের বন্যায় গাছটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভক্তদের ইচ্ছায় সেখানে এক নতুন অশ্বত্থ গাছ বসানো হয়। তার তলে এক গোলাকার বেদী বানিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় শিবলিঙ্গ। যা এখন বাবা বড় কাছারির মন্দির নামে পরিচিত।
এখানে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেশ বড় আকারে পূজা হয়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মনস্কামনা জানাতে আসেন। ছোট্ট কাগজে নিজের প্রার্থনা লিখে তাঁরা মন্দিরের গায়ে নির্দিষ্ট স্থানে বেঁধে দেন। কথিত আছে, এতেই ভক্তদের দুঃখকষ্ট লাঘব হয়। পূরণ হয় মনস্কামনা।