প্রায় ৪০০ বছর আগের এক মন্দির। সেই সময় আদিগঙ্গা ছিল বেগবতী। তার তীরগুলো ছিল জঙ্গলে ভরা নিরিবিলি জায়গা। সেসময় আদিগঙ্গার তীরগুলোয় তন্ত্রসাধকরা গড়ে তুলেছিলেন শক্তির সাধনভূমি। তেমন বিভিন্ন সাধনক্ষেত্রে গড়ে উঠেছিল দেবীর মন্দির। এমনই এক শক্তিক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দিরও। বর্তমানে এই মন্দিরের পরিচিতি বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে।
এই মন্দিরের বিশেষত্ব, এখানকার দেবীর স্বপ্নাদেশে পাওয়া ওষুধ খেয়ে নাকি বহু রোগী সুস্থ হয়েছেন। ভক্তদের থেকে এখানকার দেবীর মহিমা শুনলে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। কথিত আছে, সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে মজিলপুরের ঠাকুরবাড়ির ছেলে রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী তীর্থভ্রমণের সময় ভৈরবানন্দ নামে এক তন্ত্রসাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তন্ত্রসাধক ভৈরবানন্দ নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়ে পদ্মপুকুর নামে জলাশয়ে ৪০০ বছরের প্রাচীন এক বিগ্রহ পেয়েছিলেন। বিগ্রহটিকে তাঁরই বানানো এক ছোট্ট কুটীরে প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন ভৈরবানন্দ।
ভক্তদের দাবি, এর কিছুকাল পরে রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তীকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন ওই বিগ্রহ বা দেবী। পুকুরের কাছে পড়ে থাকা নিমকাঠ দিয়ে দেবী নিজের বিগ্রহ তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন স্বপ্নে। সেইমতো তৈরি হয়েছিল নিমকাঠের বিগ্রহ। এই নিমকাঠের বিগ্রহই পরবর্তীতে পরিচিতি পায় দেবী ধন্বন্তরী কালী রূপে। সেই রূপ আজও পূজিত হয়ে আসছে এখানে। ছোট্ট কুটীরের জায়গায় আজ এখানে দক্ষিণমুখী বিরাট মন্দির। সবটাই ভক্তদের দানের অর্থে। গর্ভমন্দিরে বেদীর ওপর রয়েছে একটি রথের সিংহাসন। যেখানে পদ্মের ওপর শায়িত মহাদেব। তাঁরই বক্ষঃস্থলে দাঁড়িয়ে দেবী কালী।
আরও পড়ুন- বাংলার জাগ্রত মন্দির, যেখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় না
দেবীর পায়ে রয়েছে নূপুর, কানে কুণ্ডল। বসন পরিহিতা দেবীর চুল কোমর ছাড়িয়েছে। ত্রিনয়নী দেবী এখানে রূপে দক্ষিণাকালী। এই দেবীর এক স্বপ্নাদিষ্ট ওষুধ আছে। সেই ওষুধ অব্যর্থ ধন্বন্তরীর মত কাজ দেওয়ায় দেবীর নাম হয়েছে ধন্বন্তরী। জয়নগর মজিলপুর স্টেশনের পূর্বদিকে মজিলপুর। পশ্চিম দিকে জয়নগর। স্টেশনে নেমে মজিলপুরের দিকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই পড়বে দেবী ধন্বন্তরীর মন্দির। প্রতি কালীপূজা, অমাবস্যা, শনি-মঙ্গলবারের পাশাপাশি প্রতিদিন শয়ে শয়ে পুণ্যার্থী এই মন্দিরে ভিড় করেন। দেবীর বার্ষিক পুজো হয় বৈশাখ মাসে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকেই এখানে চলে আসছে দেবীর নিত্যপুজো।