Advertisment

আজ ভাঙা রাস, যা মনে করায় দ্বাপরে শিব-কৃষ্ণের লীলাকাহিনি, ভুঁইঞাদের ইতিহাস

নদিয়ার রাস উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ এই ভাঙা রাস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Raas

কথিত আছে রাস উৎসব ভেঙে গিয়েছিল। দ্বাপরে কৃষ্ণের রাসলীলার কথা অনেকের মনেই কৌতূহলের সৃষ্টি করত। স্বয়ং মহাদেবের মনেও নাকি তা নিয়ে বেশ কৌতূহল ছিল। আবার, ভক্তদের অনেকের বিশ্বাস স্বয়ং যোগমায়া দেবীও কৃষ্ণের প্রতি মোহিত হয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন রাস উৎসবে। প্রথামতো ১,৬০০ গোপিনী নিয়ে রাসলীলায় অংশ নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।

Advertisment

আচমকা তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর রাস প্রাঙ্গণে মহাদেবও ছদ্মবেশে উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু, রাসলীলার নিয়ম ছিল যে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কোনও পুরুষ সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সেই নিয়ম ভঙ্গ হওয়ায় রাসলীলার প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন শ্রীকৃষ্ণ। এতে রাস উৎসব ভেঙে যায়। যাকে বলা হয় ভাঙা রাস।

কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলার স্থল ত্যাগ করার পর সখীরা ভাবতে বসেন, কৃষ্ণ না-থাকায় রাসলীলা সাঙ্গ হবে কী করে? রাসলীলাল স্থলে কৃষ্ণের অবর্তমানে সখীরা ঠিক করেন, রাধাকেই দোলায় চাপিয়ে নগর ভ্রমণ করবেন। সেদিনের জন্য রাধা বা রাই-ই হবেন রাজা। সেই থেকে চালু হয় রাই রাজা শব্দ। আর, যেমন ভাবা, ঠিক তেমনি কাজ। সেই নিয়ম আজও চলে আসছে রাস উৎসবে। যেখানে ভাঙা রাসে রয়েছে নগরভ্রমণের প্রথা। অথবা নগরভ্রমণ শেষে প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ।

তবে, সকলে প্রতিমা বিসর্জন দেন না। অনেকেরই পারিবারিক বিগ্রহ রয়েছে। সেই বিগ্রহকেই দোলায় চাপিয়ে নগর ভ্রমণ করানোর রীতি পালন করেন অনেকে। সঙ্গে আবার কুমারীকে সাজিয়ে রথে বসিয়ে চলে নগরভ্রমণ। বাংলায় রাস উৎসবে এই ভাঙারাস বিশেষভাবে মানার চল রয়েছে নদিয়ার শান্তিপুর ও নবদ্বীপে। এর মধ্যে শান্তিপুর শহরের প্রতিটি বিগ্রহ পরিবার যেমন বড় গোস্বামী, পাগলা গোস্বামী, বাঁশ বুনিয়া গোস্বামী, চাক ফেরা, মদন গোপাল-সহ অন্যান্য বিগ্রহ পরিবারগুলো রাই রাজাকে নিয়ে এমন নয়নাভিরাম শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন- কয়টি কথা, যা জানলেই গীতা, উপনিষদ এবং হিন্দুশাস্ত্র জলের মত সহজ

ভাঙা রাসের পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে আবার জুড়ে গিয়েছে ইতিহাসও। যা বলছে, যশোহর রাজ প্রতাপাদিত্য পুরীর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের আমলে পূজিত দোলগোবিন্দের বিগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, আকবরের সেনাপতি মানসিংহ বারো ভুঁইঞাদের দমন করতে বাংলা আক্রমণ করলে প্রতাপাদিত্য সেই বিগ্রহ তুলে দিয়েছিলেন তাঁদের গুরু অদ্বৈতাচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামীর হাতে। কিন্তু, পরবর্তীতে সেই বিগ্রহ চুরি যায়।

যদিও স্থানীয় এক বাসিন্দার স্বপ্নাদেশের পর তা উদ্ধার হয় এক বিল থেকে। এই ঘটনায় গোস্বামীদের মনে হয়, রাধাকে ছাড়া মাধব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাই তিনি নিজেই রাধাকে খুঁজতে চলে গিয়েছিলেন। তাই রাধাকেও রাধারমণ জিউয়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাসের দিন রাধা ও রাধারমণ জিউ মিলিত হন। রাসের সেই দৃশ্য শোভাযাত্রার আকারে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখানো হয়।

sri krishna raas utsav Bhanga Raas
Advertisment