হুগলি জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ উত্তরপাড়া। এখানে রয়েছে বহু পুরনো বিখ্যাত রামসীতা মন্দির। শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় ১,১৬৯ বঙ্গাব্দের ১৫ আশ্বিন এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। মন্দিরের নামেই রাস্তার নাম রামসীতা স্ট্রিট। এর কাছেই গঙ্গার ঘাট। তার নামও দেওয়া হয়েছে রামসীতার নামে। ঘাটের নাম রামসীতা ঘাট।
মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। উঁচু ভিতবেদীর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর দালান খিলানযুক্ত। গর্ভগৃহের সামনে রয়েছে অলিন্দ। এর পরেই রয়েছে রোয়াক। এই মন্দিরটিও অনেকবার সংস্কার করা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে ভগবান রামচন্দ্রের সঙ্গে রয়েছেন ভ্রাতা লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন। এছাড়াও রয়েছে সীতাদেবী। পাশাপাশি রয়েছে ভক্ত হনুমানজির মূর্তি। এই মন্দিরের সব মূর্তিই শ্বেতপাথরের তৈরি।
সবচেয়ে বড় মূর্তিটি রামচন্দ্রের। এরপর সীতাদেবীর। তারপর বড় মূর্তি বলতে হনুমানের। তার চেয়ে ছোট লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্নের মূর্তি। প্রতিটি মূর্তির মুখমণ্ডল অত্যন্ত কমনীয়। মুখমণ্ডলের মধ্যে একটা শান্ত ভাব রয়েছে। রাজা রাম-সহ চার ভ্রাতার এই মূর্তির বামকাঁধে রয়েছে ধনুক। মূর্তিগুলোর পোশাক রঙিন। এই মন্দিরে নিত্যপুজো হয়।
কথিত আছে, যেখানে রাম থাকেন, সেখানে হনুমানজিও থাকেন। আর, যেখানে হনুমানজি থাকেন, সেখানে কোনও গ্রহ পীড়া দিতে পারে না। শুধু তাই নয়, শ্রীরামচন্দ্র ভক্তবৎসল। হনুমানজিও তাই। তাঁরা ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন বলেই কথিত আছে। যে কারণে, বিভিন্ন রামসীতা এবং হনুমান মন্দিরে অবাঙালি ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। আর, সেই একই কারণে উত্তরপাড়ার এই সুপ্রাচীন মন্দিরও ভক্তদের একাংশের কাছে অত্যন্ত পছন্দের।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবী ভীমাকালী, দেবী যেখানে কান পেতে শোনেন ভক্তের মনের কথা
মন্দির খোলা হয় সকাল ১০টা ও সন্ধে ৭টার পর। দর্শনের উদ্দেশ্যে এই সময়ই মন্দিরে যেতে হয়। অন্য সময় মন্দিরটি বন্ধ থাকে। এই মন্দিরটি দেবসেবা সমিতি পরিচালনা করে। হাওড়া থেকে সড়ক ও রেলপথে উত্তরপাড়া যাওয়া যায়। আবার বালিখাল থেকে আসলে দুই কিলোমিটার দূরত্বে দোলতলা স্টপেজ। সেখানে নেমেই যেতে হয় রামসীতা মন্দিরে।