দীর্ঘ ইউরোপীয় শাসনকালে বাংলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রসার নেহাত কম ঘটেনি। সেভাবেই কলকাতা থেকে বেশ খানিকটা দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে গড়ে উঠেছিল রানাঘাট বেগোপাড়া চার্চ। এই গির্জার প্রাচীন পুরোহিত অবশ্য এর নাম রেখেছিলেন, 'আওয়ার লেডি অফ গুয়াডালুপ'। যে চার্চকে কেন্দ্র করে একটা গোটা পাড়ার বাসিন্দারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ে দীক্ষিত হয়েছেন। যার কারণে আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে বেগোপাড়া খ্রিস্টান পাড়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
আওয়ার লেডি অফ গুয়াডালুপ- এই নামকরণের পিছনে অবশ্য আছে এক দীর্ঘ কাহিনি। কথিত আছে, রানাঘাটের এই ক্যাথলিক চার্চের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মেক্সিকোর এক কাহিনিকে কেন্দ্র করে। মেক্সিকোর ওই কাহিনি অনুযায়ী, এক আদিবাসী ছেলেকে পাহাড়ের ওপরে মাদার মেরি দর্শন দিয়েছিলেন। ওই ছেলেটি সেই কথা প্রতিবেশীদের বললেও কেউ বিশ্বাস করেননি। ছেলেটি এরপর পাহাড়ে যান আর মাদার মেরিকে এই বিশ্বাস না-করার কথা বলেন।
ছেলেটিকে সত্য প্রমাণ করতে মাদার মেরি একটি গোলাপ ফুলে ভরা চাদর আশীর্বাদ হিসেবে দেন। মেক্সিকোতে গোলাপ দেখা যায় না। সেই চাদর নিয়ে আদিবাসী ছেলেটি প্রতিবেশীদের কাছে যান। তখন চাদরের ওপর ফুটে ওঠে মাদার মেরির মুখ। এই ঘটনা ঘটেছিল কোনও এক ১২ ডিসেম্বর। ওই চাদরের জন্য ছেলেটির কথা মেক্সিকোর স্থানীয় বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেন। ক্যাথলিক সম্প্রদায় এই কাহিনিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সাড়ম্বরে পালন করে।
আরও পড়ুন- বাংলার সবচেয়ে পুরোনো গির্জা, কতটা জানেন ব্যান্ডেল চার্চ সম্পর্কে?
সেই কাহিনিকে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে বেগোপাড়ার এই চার্চ। যে চার্চকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন লুইস গবেস্টি নামে এক ব্যক্তি। প্রথম দিকে ইউরোপীয়রা ফাদার হিসেবে এই চার্চের দায়িত্বে থাকতেন। পরবর্তী সময়ে এই চার্চের দায়িত্ব চাপে বাঙালি ফাদারদের কাঁধেই। বড়দিনে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য চার্চের দ্বার থাকে অবারিত। রাত বারোটায় এই গির্জা মন্দিরে পালন করা হয় যিশুর জন্মদিন। কেক কেটে তা বিতরণ করা হয় প্রসাদ হিসেবে।