বাংলার জাগ্রত কালীমন্দিরের ইতিহাসে উত্তর দিনাজপুরের বয়রা কালীর নাম অন্যতম। একেই উত্তরবঙ্গ। তার ওপর সীমান্ত জেলা উত্তর দিনাজপুর। তাই দক্ষিণবঙ্গের অনেকেই দেবী বয়রা কালীর নাম জানেন না। কিন্তু, যাঁরা জানেন। অথবা, যাঁরা এই কালীমন্দিরে একবার ঘুরে গিয়েছেন, সেই সব ভক্তরা আর অন্য কোনও কালীমন্দিরে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না। কারণ, এখানেই তাঁর মনস্কামনা পূরণ হয়ে যায়।
এই মন্দিরের পাশ দিয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আবার কালিয়াঞ্জ শহরের বুক দিয়ে গিয়েছে শ্রীমতি নদী। এখন আর নদীর সেই গতি নেই। কিন্তু, একটা সময় এই শ্রীমতি নদী দিয়েই চলত ব্যাপক আকারে পণ্য পরিবহণ। বড় আকারের বাণিজ্য নৌকো নিয়েই শ্রীমতি নদী ধরে দূর-দূরান্তে যেতেন ব্যবসায়ীরা। পথে বয়রা গাছের নীচে দেবী কালীর মন্দিরে তাঁরা পুজো দিতেন। দেবীর নাম তাঁরাই দেয় বয়রা কালী।
নানারকম মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় দেবী বয়রা কালীর খ্যাতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে মজে যেতে শুরু করে শ্রীমতি নদী। এই নদীপথ দিয়ে বাণিজ্যযাত্রা ক্রমশ কমে যায়। দেবী বয়রা কালী ও সংলগ্ন অঞ্চল ধীরে ধীরে পরিণত হয় ঘন জঙ্গলে। যাতে ঢাকা পড়ে কালী মন্দির। সেখানে বণিকদের বদলে যাতায়াত শুরু করে ডাকাতরা। এই জঙ্গল পরিণত হয় ডাকাতদের অঞ্চলে। কিন্তু, সেই ডাকাতরাও দেবী বয়রা কালীর পুজো চালিয়ে যাওয়া শুরু করেন।
আরও পড়ুন- দেবী যেখানে মেটান ভক্তদের কামনা, বিপদে-আপদে সিদ্ধেশ্বরী কালীই ভরসা কালনাবাসীর
ব্রিটিশ আমলে ১৯৩২ সাল নাগাদ এখানকার দারোগা হিসেবে নিযুক্ত হন এক ভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তি। কিন্তু, শোনা যায় ডাকাত দমন করতে গিয়ে তিনিও দেবী বয়রা কালীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। যে কারণে সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষের থেকে চাঁদা তুলে, নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ওই ভিন্ন সম্প্রদায়ের দারোগা তৈরি করে দেন দেবী বয়রা কালীর মন্দির।
তারপর থেকে প্রতি দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী সাড়ম্বরে পূজিতা হয়ে আসছেন। দেশ-বিদেশ থেকে এই পুজোতে যোগ দিতে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত। ১৯৯৮ সালে এই ভক্তদের দেওয়া অর্থেই গড়ে তোলা হয়েছে দেবী বয়রার অষ্টধাতুর মূর্তি। সোনার অলঙ্কার থেকে কোনও কিছুরই অভাব নেই এই মন্দিরে। কারণ, দেবী বয়রা কালীর অলৌকিক মাহাত্ম্যের কথা ভক্তদের মুখে মুখে ফেরে।