scorecardresearch

সিংহেশ্বরী সতীপীঠ, এখানে হামেশাই ঘটে দেবীর অলৌকিক কর্মকাণ্ড

ভোররাতে পুকুরে কারও স্নানের শব্দ শোনা যায়। শোনা যায় নূপুরের শব্দও।

Niyogi Durga

কথিত আছে এখানে স্বয়ং দেবী দুর্গা এসেছিলেন ভোগ খেতে। ভদ্রেশ্বরের নিয়োগী বাড়ির দেবী দুর্গা নাকি ঠিক এতটাই জাগ্রত। হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন লাইনে ভদ্রেশ্বর স্টেশন। সেখান থেকে টোটো যায় দিগরা শিবতলা। ওই স্টপেজের কাছেই রাস্তার ডানদিকে রয়েছে পুকুর। পুকুরের ওপরের ব্যানারে লেখা আছে, এখানে দেবী সতীর দক্ষিণ চরণতল পতিত হয়েছিল। প্রায় পাশেই ভদ্রেশ্বর নাথের শিবমন্দির। তার পাশে রয়েছে একটি বাড়ি। তার প্রথম বাড়িই হল শুভজিৎ নিয়োগীর। দোতলায় পূজিত হন দেবী সিংহবাহিনী। বাড়ির লোকজনের দাবি, ভদ্রেশ্বর নাথ হলেন দেবীর ভৈরব। আর দেবীর এই পুজোস্থলই সিংহেশ্বরী সতীপীঠ।

মাত্র তিন বছর আগে, ২০২০ সালে ভাদ্র সংক্রান্তি পড়েছিল বৃহস্পতিবার। সেই দিন মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পুজো পড়েছিল একসঙ্গে। কথিত আছে, সেই ভোরে শুভজিৎ নিয়োগী দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশে বলা হয়েছিল, তাঁর বাড়ির সামনের পুকুরে দেবী দুর্গার দক্ষিণ পায়ের তালু পড়েছে। আর, তা নাকি শিলারূপে জলের তলায় রয়েছে। স্বপ্নাদেশে সেই শিলাকে উদ্ধার করে পুজো করার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন দেবী। দেবীর স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরই শুভজিৎ নিয়োগী গামছা পরে সূর্য ওঠার আগে পুকুরে ডুব দিয়েছিলেন। আর, একডুবে শিলাখণ্ডটি উদ্ধার করে এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সেই বছর, ২০২০ সালে মহালয়ার একমাস পর পড়েছিল দুর্গাপুজো। সেই হিসেবে এই বাড়ির পুজোয় এক শিল্পীকে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। শিল্পীর তৈরি মূর্তিতে দেবী দুর্গা আর দেবী জগদ্ধাত্রীর মিলিত রূপ উঠে এসেছিল। দেবী এখানে দশভুজা। তবে তিনি মহিষাসুরকে বধ করেননি। বরং, এখানে মহিষাসুর দেবীর পায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী রূপে রয়েছেন। দেবীর সঙ্গে নেই লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ কার্তিক। বদলে রয়েছেন জয়া ও বিজয়া। এখানে কোনও পশুবলি প্রথা নেই। বদলে দেওয়া হয় কলা, শশা ও আখ বলি। দুর্গাপুজোর ২১ দিন আগেই হয় দেবীর ঘট পরিবর্তন আর অঙ্গরাগ। ঘট পরিবর্তন দেবীর স্বপ্নাদেশের পরেই হয়। শুধু তাই নয়, অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এখানে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে।

একবার সন্ধিপুজোর সময় যখন দেবীর ভোগ নিবেদন চলছে, সেই সময় এক মহিলা তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতে এসেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কিছু খাইনি, খিদে পেয়েছে। বাড়িতে পুজো হচ্ছে, আমাকে আর আমার মেয়েকে কিছু খেতে দে।’ শুভজিৎ নিয়োগীর মা থালায় ভরে ভোগ ওই মহিলা ও তাঁর দুই মেয়েকে দিয়েছিলেন। তাঁরা সেটি খেয়েছিলেন। এরপর আগন্তুকদের টাকা দিতে এসে শুভজিৎ নিয়োগীর মা দেখতে পান, বাইরে কেউ নেই। আশপাশের সকলকে ওই আগন্তুকদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলেও তাঁরা জানান, কাউকে দেখতে পাননি। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে বাড়ির সামনে শিবমন্দিরে দেখা যায় কোনও মহিলার ডান পায়ের আলতা পরা ছাপ। আশ্চর্যের বিষয় হলেও ওই মন্দিরে আর কোনও ছাপ দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন- মদারাটের জাগ্রত দেবী রক্ষাকালী, হোমের কলা খেলে নিশ্চিত সন্তান লাভ, বিশ্বাস ভক্তদের

একবার অঙ্গরাগের সময় শিল্পী এসে মূর্তিটি সাদা রং করে গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে দেবীর শয়ন ভাঙার সময় ঘরে ঢুকে নিয়োগী বাড়ির লোকজন দেখতে পান, দেবীর মাথাভর্তি সিঁদুর। শিল্পীর নিপুণতায় সেই সিঁদুর পরিষ্কার না-করেই দেবীর গায়ের কচি হলুদ রং দিয়ে হয় অঙ্গরাগ। বাড়ির লোকেদের ধারণা, দেবী এখানে নিজেই সিঁদুর পরেছিলেন। শুধু এসবই না। দেবী এখানে যে ব্যক্তি অঙ্গরাগ করেন, তাঁর বদলে অন্য কারও হাত থেকে অঙ্গরাগ নেন না। সেই নিয়েও রয়েছে অলৌকিক কাহিনি।

এখানে মধ্যরাতে দেবীর পায়ের নূপুরের শব্দ শোনা যায় বলেই দাবি নিয়োগী বাড়ির সদস্যদের। শুধু তাই নয়, দোতলা থেকে ভোররাতে কেউ পুকুরের দিকে যাচ্ছে, সেই শব্দও এখানে শোনা যায়। পুকুরে ডুব দেওয়ার শব্দ, পুকুর থেকে ঠাকুরঘরের দিকে কারও আসার শব্দও পাওয়া যায়। অনেকে আবার এখানে ভোররাতে ঠাকুরঘরে কারও ডান পায়ের ভেজা ছাপও দেখতে পেয়েছেন। এবার এই পুজোর চতুর্থ বছর। এখানে নিত্যপুজোয় দেবীকে ফল ও মিষ্টি নিবেদন করা হয়। আর, দুর্গাপুজোর দিনগুলোয় হয় অন্নভোগ।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: The famous durga puja of niyogi house in bhadreshwar