রাজপুর বিপত্তারিণী চণ্ডী মন্দির ভক্তদের অত্যন্ত ভরসাস্থল। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বাবা দুলাল নামে এক সাধক। তাঁর বাবার নাম ছিল সাধনচন্দ্র দাস। মায়ের নাম বসন্তকুমারী দাস। তাঁদের ছেলে দুলালচন্দ্র দাসই পরবর্তীতে পরিচিত হয়ে ওঠেন বাবা দুলাল নামে। ছোট থেকেই ঈশ্বরভঙ্গ বাবা দুলাল পরবর্তীতে দেবী চণ্ডীকে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বেলগাছের নীচে বসে কৃষ্ণবর্ণা, সিংহবাহিনী দেবীর সাধনা করতেন। তাঁর সেই সাধনাস্থল ভক্তদের কাছে রত্নবেদী নামে পরিচিত।
ভক্তদের দাবি, সাধক দুলালের কাছে গিয়ে কোনও মনস্কামনা জানালে তিনি তা পূরণ করে দিতেন। এখনও এই মন্দিরের ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে দেবী বিপত্তারিণী চণ্ডী ভক্তদের সকল মনস্কামনা পূরণ করেন। এখানে দেবীর নিত্যপূজার ব্যবস্থা আছে। কথিত আছে, সাধক দুলালচন্দ্র দাস দেবী চণ্ডীর দর্শন পেয়েছিলেন। দেবীই নাকি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর রূপ কেমন হবে। কীভাবে তাঁর পূজা করতে হবে।
গড়িয়া থেকে বারুইপুর যাওয়ার পথে রাজপুর বাজারের কাছে বাঁদিকে কিছুটা এগোলেই পড়বে বিপত্তারিণী চণ্ডী মন্দির। এই মন্দিরে দেবী চণ্ডীকে ঘিরে রয়েছে অজস্র অলৌকিক কাহিনি। এখানে দেবী বিপত্তারিণীর চারটি হাত। দেবীর একহাতে খড়গ, অন্যহাতে ত্রিশূল, অন্য দুই হাতে দেবী বরাভয় ও অভয়দান কারিণী। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই মন্দিরে ভক্তদের ব্যাপক ভিড় হয়। বছর দু'বার হয় বিশেষ পুজো। সোজা এবং উলটোরথের মধ্যে মঙ্গলবারে এখানে হয় দেবী বিপত্তারিণীর পুজো। ভোর থেকেই শুরু হয় ভক্ত সমাগম।
আরও পড়ুন- দেবী দুবরাজেশ্বরী ত্রিশক্তি মহামায়া মন্দির, আজও মধ্যরাতের পর যেখানে ভক্তরা থাকেন না
দেবীকে ১৩ রকমের ফল, মিষ্টি দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। পাশাপাশি দুর্গা নবমীতেও হয় দেবীর বিশেষ পুজো। এখানকার ভক্তরা বিপত্তারিণী ব্রতের যে নিয়ম মানেন, তা হল- আগের দিন একবেলা নিরামিষ আহার, রাতে লুচি বা পরোটা খাওয়া। সেই সময় রুটির মত পোড়া কোনও খাওয়ার খাওয়া হয় না। ব্রতপালনের দিন ১৩টা ফল দিয়ে পুজো হয় একটাই কারণে। সেটা হল, ১২ মাসের জন্য ১২টা ফল এবং সংসারের সব ঝামেলা মেটাতে ১টি ফল দিয়ে পুজো। সঙ্গে, মিষ্টি দিয়ে দেবীর পুজো দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেবীর ব্রতকথা শোনা এবং অঞ্জলি দেওয়াও এখানকার নিয়ম। ব্রতের দিন পুজোর প্রসাদ সঙ্গে দিনে ও রাতে ফল ও মিষ্টি খেয়ে থাকেন ভক্তরা।