Advertisment

জাগ্রত দেবী রক্ষা করেন বিপদে, দাপটকালীর পুজোয় ভিড় করেন কয়েক লক্ষ ভক্ত

পাল যুগ থেকে এই পুজো চলছে।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Devi_DapatKali

শক্তিভূমি বাংলার নানা প্রান্তে রয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। আর, তাঁদের সাধনায় যেন জাগ্রত হয়ে উঠেছেন দেব-দেবীরাও। তাঁরা এখানে ভক্তদের রক্ষা করতে সদা তৎপর। তেমনই এক জাগ্রত দেবী হলেন বিকটকালী। এই দেবীর মন্দির রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। এই জেলায় প্রাচীনতম পূজাগুলোর মধ্যে চামুণ্ডা দেবী দাপটকালীর পুজো অন্যতম। জেলার হিল্লি ব্লকের দ্বিমোহনি গ্রামে রয়েছে দেবীর মন্দির। এই দেবী দাপটকালীকে ভক্তরা অনেকে বিকটকালী বলেও ডাকেন।

Advertisment

দেবীর পুজো প্রায় ১,১০০ বছরের প্রাচীন। কথিত আছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বাংলার পাল যুগ থেকেই দেবী পূজিতা। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে হয় দেবীর বাৎসরিক পুজো। আর, বছরভর চলে নিত্যপুজো। বাৎসরিক পুজোর সময় ৯ দিন আগে থেকে চলে দেবীর বিশেষ পুজো। আর, বাৎসরিক পুজোর ঠিক পাঁচ দিন আগে দেবীর ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবী এতটাই জাগ্রত যে, কয়েক লক্ষ ভক্ত এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন।

হিন্দুদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষজনও পুজোয় অংশ নেন। পুজো উপলক্ষে বিরাট মেলা বসে। এই মেলা আকারের দিক থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা। আর, চামুণ্ডা মেলা হিসেবে সমগ্র গৌড়বঙ্গের মধ্যে এই মেলা বৃহত্তম। ভক্তদের বিশ্বাস, এই জাগ্রত দেবী আজও ভক্তদের রক্ষা করতে আসেন। প্রয়োগ করেন তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা। আর, সেই বিশ্বাস থেকে এই চামুণ্ডা মেলায় ভক্তদের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

দেবীর মন্দিরের সঙ্গেই রয়েছে শিব মন্দির। পাশাপাশি, এই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় মন্দির। দেবীর মূল মন্দিরের পাশে পূর্বদিকে আছে এক বড় দিঘি। এই মন্দিরের বিশেষত্ব, এখানে কোনও বিগ্রহ নেই। আছে দেবী চামুণ্ডার মুখোশ। তাকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। দেবীর মূল মুখোশ ছাড়াও আছে আরও কয়েকটি চামুণ্ডা মুখোশ। সেগুলোও সযত্নে পুজো করা হয়। ভক্তরা সেই সব মুখোশ পরে নৃত্যও প্রদর্শন করেন।

এই দেবীর মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা লোককথা। কথিত আছে, গ্রামে কারও কোনও অনুষ্ঠান থাকলে দেবীর দিঘির পাড়ে গিয়ে তা জানিয়ে এলে, পরদিন সেখানে বাসনপত্র পাওয়া যেত। যা ব্যবহারের পর দিঘিতেই ফিরিয়ে দিতেন ভক্তরা। বাংলাদেশের মুক্তিযুক্তের সময়, দেবীর মন্দিরের মাঠে এক অস্থায়ী শিবির তৈরি করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। সেসময় দেবী মন্দিরের কাছে তেঁতুলগাছের তলায় বিষধর সাপের ছোবলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক জওয়ান। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় দেবীর মন্দিরে পুজো দেওয়ায় তিনি সেরে উঠেছিলেন।

আরও পড়ুন- সুপ্রাচীন অতিজাগ্রত মন্দির, যেখানে দেবী জলজ্যান্ত মানুষের মতই ভক্তদের কামনায় সাড়া দেন

এখানে ভারতীয় সেনা মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের জন্য মানতও করেছিল। দেবীর বাৎসরিক পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকে ডালা। ভক্তরা ডালায় করে ফলমূল, মিষ্টি, দই-চিঁড়ে দেবীকে ভোগ দেন। এই পুজোয় লাঠিখেলারও প্রচলন রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার এই মন্দিরে সাপ্তাহিক পুজো হয়। এই মন্দিরে আসতে গেলে, কলকাতা বা হাওড়া থেকে তেভাগা এক্সপ্রেসে চেপে আসতে হবে বালুরঘাট স্টেশন। সেখান থেকে বালুরঘাট স্টেশন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে হিলি রুটের গাড়ি চেপে আসতে হয় ত্রিমোহনি বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে দেবীর মন্দিরে হেঁটে যেতে সময় লাগে ১০ মিনিট।

Temple Kali Puja pujo
Advertisment