বাংলায় জাগ্রত মন্দিরের অভাব নেই। তবে, কোন মন্দিরগুলো জাগ্রত, সেটা বোঝা ভক্তদের কাছে প্রায়শই কঠিন হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা বা পুরোনো ভক্তরা অবশ্য সেসব জানেন। তাঁদের থেকে জানতে পেরেছেন আরও অনেক ভক্ত। ভক্তদের বিশ্বাস, এই সব মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ হয়। অনেক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাও পাওয়া যায়। এমনই এক মন্দির হল উত্তর ২৪ পরগনার টাকির কূলেশ্বরী কালী মন্দির। বসিরহাট মহকুমার টাকি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে এই মন্দির। পুজোর দিনগুলোয় দেবীকে প্রচুর গয়না পরিয়ে সাজানো হয়।
এই পুজো ৪০০ বছরের পুরোনো। একটা সময় এই পুজোয় কামান দাগা হত। বলি হত শতাধিক পাঁঠা ও মোষ। বর্তমানে এখানে মোষবলি বন্ধ হলেও পাঁঠাবলি সমানতালে চলছে। হাসনাবাদে টাকির এই কূলেশ্বরী কালী মন্দিরের পুজো দেখতে আজও ভিড় করেন অগণিত ভক্ত। কারণ, ভক্তরা বিশ্বাস করেন দেবী এখানে অত্যন্ত জাগ্রত। পুজোর দিন টাকি, হাসনাবাদের বিভিন্ন এলাকা, বসিরহাটের নানা জায়গা এমনকী কলকাতা-সহ দূর-দূরান্ত থেকেও ভক্তরা এই মন্দিরে ভিড় করেন। দেবীর কাছে পুজো দেন।
কথিত আছে বহুবছর আগে ইছামতীতে জেলেদের জালে উঠে এসেছিল সুন্দর নকশাকরা ঘট। সেকথা জানতে পারেন টাকির জমিদার রায়চৌধুরীরা। জমিদার গিন্নি সেই রাতেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, চালাঘর তৈরি করে ঘটটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খড়, বিচালি, গোলপাতা দিয়ে মাটির দেওয়ালের মন্দির বানিয়ে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। নদীর কূল থেকে ঘটটি পাওয়া গিয়েছিল বলে মন্দিরের নাম হয় কূলেশ্বরী কালীবাড়ি।
আরও পড়ুন- জাগ্রত অলৌকিক-কাণ্ডে ভরপুর নারনা কালী মন্দির, দেবী পূজিতা দুর্গা রূপে
তবে, পুজো শুরু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মতভেদ আছে। টাকির জমিদার রায়চৌধুরীরা যশোরের ভুঁইয়া প্রতাপাদিত্যের বংশধর। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী টাকিতে বসতি স্থাপন করেন। সেই সময় টাকির বেশিরভাগ এলাকাই ছিল জঙ্গলে ভরা। স্থানীয়দের একাংশের বিশ্বাস, কূলেশ্বরী কালীপুজোর শুরু হয়েছিল মহারাজা প্রতাপাদিত্যের আমলে। সে যাই হোক, এখানে কার্তিক অমাবস্যার দিন বেশ জমজমাট করে দেবীর পুজো হয়। ১২ পুরুষ ধরে এখানে পুজো করে চলেছেন মন্দিরের পুরোহিতরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কূলেশ্বরী কালীর আদি মন্দির ছিল হাসনাবাদের রোজিপুর এলাকার কালীতলায়। অঘ্রাণ মাসে দেবী কূলেশ্বরীর কাছে অনেকেই নানা কামনা করে উপবাস করেন। যাকে কূলের ব্রতপালন বলা হয়। এছাড়াও এখানে চলে নিত্যপুজো ও অন্নভোগ। বছরের বিশেষ তিথিতে এই মন্দিরে বড় আকারে পুজো করা হয়। ভক্তদের একাংশের দাবি, পুজোর রাতে এই মন্দিরের কাছে পুকুর পাড়ে বকুল গাছে দেবীকে পা ঝুলিয়ে দোল খেতে অনেকেই দেখেছেন।