কালীতীর্থ বাংলা। যার নানা প্রান্তে অজস্র কালীমন্দির আর কালীকাহিনি। শুনলে মনে হতে বাধ্য, বাস্তবের দুনিয়ায় থেকেও আমরা রয়েছি কোনও জাদুর দেশে। অলৌকিক সেই সব কাহিনি, সবরকম সংস্কার আর বিজ্ঞান চেতনাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
কারণ সাধারণ বিজ্ঞান চেতনায় যা অস্বাভাবিক অথবা অসম্ভব বলে মনে হয়, তাই যেন অনায়াসে সম্ভব হয়ে ওঠে সাধকের সাধনায়। আর, এই বাংলাই তা বারেবারে দেখেছে। যদিও সেই সব কাহিনির সামান্যটুকুই আমরা জানতে পারি। অথবা, বলা যায় অজানাই থেকে যায় অনেকখানি।
শক্তিসাধনার সেই বিরাট সমুদ্রের মত কাহিনির মধ্যে সামান্য যেটুকু আমাদের কানে এসেছে, তার অন্যতম বাঁকুড়ার সোনামুখীর 'মাইতো কালী'। একটা সময় এই বাংলা আক্রমণ করেছিলেন মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত। বর্গিদের সেই আক্রমণের সময় বাংলায় ছিল নবাবি শাসন। এই কাহিনি সেই সময়কার। সময়টা ১১৪৯ বঙ্গাব্দ।
ভাস্কর পণ্ডিতের বর্গিদল তখন বাংলার আনাচ-কানাচে লুঠতরাজের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাঁকুড়ার সোনামুখীতেও পৌঁছে গিয়েছিল বর্গিরা। তাদের ভয়ে সেই সময় পথঘাটে বেরোতে ভরসা পাচ্ছিলেন না-বাসিন্দারা। তারই মধ্যে ছিল দেবীর কালী মন্দির।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবী কিরীটেশ্বরী, দূর-দূরান্ত থেকে মনস্কামনা পূরণের জন্য ভিড় করেন ভক্তরা
সন্ধ্যায় সেই মন্দিরে দেবীর কাছে আলো দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন পুরোহিত। মন্দিরে ঘটের সামনে তিনি যখন দেবীকে প্রণাম করছিলেন, সেই সময় বর্গিদের সর্দার তাঁকে বলি দিতে উদ্যত হন। কথিত আছে, সেই সময় অলৌকিকভাবে বর্গি সর্দারের অস্ত্র নীচের দিকে নামেনি। শুধু তাই নয়, সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবে আচমকা ওই বর্গি সরকার অন্ধ হয়ে যান।
সেই সময় দেবীর কাছে প্রার্থনা করে ওই বর্গি সর্দারকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন বৃদ্ধ পুরোহিত। এই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী বর্গি সেনা এরপর, 'মাই তো কালী', 'মাই তো কালী' ধ্বনি দিতে দিতে ফিরে যায়। স্থানীয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ির এই পুজো আজ সোনামুখীর সর্বস্তরের মানুষের পুজো হয়ে উঠেছে। কালীপুজোর সময় পাঁচ দিন ধরে এখানে চলে দেবীর বিশেষ আরাধনা।