রাঢ়বঙ্গের শক্তিসাধনায় সময় কখনও শেকল পরাতে পারেনি। শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গিয়েছে। শাসনক্ষমতা বদলেছে। তবে শক্তিসাধনা থেকেছে আগের মতই দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠান পালন। শক্তির তেমনই এক পীঠস্থান পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের কালীমন্দির। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যেখানে পুজোপাঠের চল শুরু বাদশা শেরশাহের জিটি রোড তৈরির আগে থেকে। ইতিহাস বলে, একসময় ওই এলাকায় শ্মশান ছিল। চারপাশ ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। আশপাশে জনবসতি না-থাকায় মরা পোড়ানো ছাড়া বাসিন্দারা জঙ্গলের কাছে ঘেঁষতেন না।
তারই মধ্যে এক কাপালিক সেখানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। তালপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করেছিলেন অস্থায়ী ঠিকানা। সেখানে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসেই চলত তাঁর সাধনা। বংশ পরম্পরায় স্থানীয় বাসিন্দাদের শোনা কথা, ওই কাপালিকের হাত দিয়ে তৈরি হয়েছিল মন্দির। জনশ্রুতি এমনটাও রয়েছে যে সেখানে নরবলি হত। আর, তার পিছনে রয়েছে ডাকাতরা। যারা কোথাও ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে সেই মন্দিরে দেবীকে তুষ্ট করতে নরবলি দিত। কাপালিকের ছাউনি পরে ঘরের চেহারা নেয়। তৈরি হয় পরিবার। সেই পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় ওই মন্দিরে তন্ত্র সাধনা করেছেন।
আরও পড়ুন- সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের হাত ধরেই বেহালার বড়িশায় শুরু চণ্ডীপুজো, ভক্তদের বিশ্বাস দেবী জাগ্রত
একবার নাকি পুজো করতে এসে ডাকাতদের নরবলির কাটা মুন্ড দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন তান্ত্রিক পরিবারের এক সদস্য। তারপর থেকে তিনিই নরবলি বন্ধে উদ্যোগ নেন। ক্রমশ, নরবলির বদলে শুরু হয় ছাগবলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনার যাতায়াতের জন্য ওই রাস্তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। জঙ্গল কেটে সাফ করা হয়। ওই জায়গার আশপাশে তৈরি হয় জনবসতি। আর, তাতেই ভরসা করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয় কমে। তাঁরা নিত্যদিন এই মন্দিরে পুজোপাঠ শুরু করেন।
বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। আর তাই, দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে পুজো দিতে আসেন। মানত করেন। মনস্কামনা পূরণ হলে অনেকে মূল্য ধরে দেন। তবে, অনেকে আবার ছাগবলিও দেন। দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে এখানে ১০৮ রকমের ভোগের আয়োজন থাকে। এই মন্দিরের বিশেষত্ব, দেবীর মাছভোগ। ছাগবলি হলেও মাছের পদটা দেবীর ভোগে থাকেই।