ইতিহাস আমাদের চিনিয়েছে চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী কর্ণগড়ের রানি শিরোমণিকে। মেদিনীপুর আর ওড়িশা সীমান্তের কাছে কর্ণগড় ছিল রানি শিরোমণির রাজধানী। তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে আছে দেবী মহামায়ার মন্দিরের নাম। কথিত আছে, এই মন্দির রানি শিরোমণির প্রতিষ্ঠিত। অনেকে যদিও বলেন যে, রানি শিরোমণি নন। কর্ণগড়ের মহামায়া মন্দির আরও পুরোনো। সে গেল ইতিহাসবিদদের বিষয়।
এটুকু জানা যায় যে শিবায়ন কাব্যের রচয়িতা কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য এই মন্দিরে বসেই নাকি তাঁর কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর এই কাব্যে কর্ণগড়ের রাজপরিবারের বর্ণনা আছে। নামে মহামায়া মন্দির হলেও, কর্ণগড়ের এই মন্দিরে একইসঙ্গে দেবী বগলারও বিগ্রহ আছে। ভক্তদের দাবি, এখানকার দেবী বগলা অত্যন্ত জাগ্রত। মন্দির খোলা থাকে সকাল ৮টা ৩০ থেকে। শীতকালে সন্ধে ৭টার মধ্যে মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। আর গ্রীষ্মকালে মন্দির খোলা থাকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মেদিনীপুর সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট এই মন্দির চত্বরের মধ্যেই লাগোয়া দণ্ডেশ্বর শিবের মন্দির। ভাদুতলা থেকে পাওয়া যায় অটো ও টোটো। মহামায়া মন্দিরের প্রবেশদ্বারে আছে পঁচাত্তর ফুট উঁচু পাথরের তোরণ। এখানে দেবীকে নানা পদ দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। দেবীর আমিষ ভোগ প্রথাও প্রচলিত আছে। মন্দির চত্বরে রয়েছে সিদ্ধিকুণ্ড। সেই জল শুধু দেবীর অন্ন ও পুজোর কাজে লাগে। এমনভাবে সেই কুণ্ড ঘেরা, যে সেখানে প্রায় আলোই পৌঁছয় না। কিন্তু, কখনও এই কুণ্ডের জল নষ্ট হয় না। আবার, যতই গরম পড়ুক না-কেন, এই কুণ্ডের জল কখনও শুকিয়েও যায় না।
আরও পড়ুন- চাতুর্মাস্য ব্রতের সময়সূচি, জানেন কীভাবে তা পালন করতে হয়?
এই মন্দির ঘিরে রয়েছে এক সিদ্ধপুরুষের কাহিনিও। তিনি এই মন্দিরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। বিশেষ তিথিতে তাঁর ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন। ভিড় করেন গুরুপূর্ণিমার দিন। দেবীর ভোগ পাওয়ার জন্য সকাল ৯টার মধ্যে এসে এখানে কুপন কাটতে হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে এসে প্রার্থনা করলে দেবী মনস্কামনা পূরণ করেন।