Advertisment

মনস্কামনা পূরণে সিদ্ধহস্ত জাগ্রত দেবী মুক্তকেশী, ভক্তরা বলেন দেবী ভবতারিণীর বোন

তিন শতাব্দী পুরনো মন্দির।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Devi_Muktakeshi

গঙ্গার এপার আর ওপার। এপাশে দক্ষিণেশ্বরের দেবী ভবতারিণী। অন্যপাশে উত্তরপাড়ার মুক্তকেশী। ভক্তদের দাবি, দেবী মুক্তকেশীর সঙ্গে দেবী ভবতারিণীর রূপের বহু মিল আছে। যা দেখে ভক্তরা অনেকে দেবী মুক্তকেশীকে দেবী ভবতারিণীর সখী, কেউ বা বোনও বলে থাকেন। কথিত আছে আজও দেবী মুক্তকেশী গঙ্গার ওপারে দেবী ভবতারিণীর সঙ্গে দেখা করতে যান। ভক্তদের অনেকে দেখেছেন, ভোরবেলায় এক লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরা বধূ মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঘাটে নামছেন। কিন্তু, তারপর আর তাঁকে দেখা যায় না। এমনটাই নাকি হামেশাই ঘটে এই মন্দিরের ঘাটে।

Advertisment

দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের মতই মুক্তকেশী দেবীর মন্দিরটিও রয়েছে গঙ্গার পারেই। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। যেখানে মনস্কামনা জানালে পূরণ হয়। সেই কারণে, বহু ভক্ত এখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য আসেন। পাশাপাশি মন্দিরটি বেশ ঐতিহ্যবাহীও। প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। এই মন্দিরের ডানদিকে রয়েছে কষ্টিপাথরের বিশাল আকারের শিলা। সেই শিলায় প্রতিদিন ফুল, বেলপাতা ও সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই শিলাই নাকি দেবী মুক্তকেশীর আগের রূপ। তিনি সেবায়েত মজুমদার পরিবারের এক সদস্যকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, ডাকাতের হাত থেকে বিগ্রহ বাঁচানোর জন্য। কারণ, ডাকাতরা নাকি দেবীর বিগ্রহ গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল। আর, দেবীর বিগ্রহ বালি খালের পূর্ব পাড়ে ভেসে উঠেছিল। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসার জন্যই স্বপ্নে মজুমদার পরিবারের সদস্যকে আদেশ দিয়েছিলেন দেবী।

স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যরা গিয়ে বালি খালের পূর্ব পাড়ের ঘাটে দেবীর শিলা বিগ্রহ দেখতে পেয়েছিলেন। আর, শিলারূপী বিগ্রহকে মন্দিরে নিয়ে এসেছিলেন। দেবী নাকি স্বপ্নাদেশে বলেছিলেন যে, কষ্টিপাথরের শিলায় যেন কোনও ছেনি-হাতুড়ির স্পর্শ করা না-হয়। শিলাকে যেন অবিকৃত রূপেই পুজো করা হয়। একইসঙ্গে দেবী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে যদি কেউ শিলাকে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে স্পর্শ করে, তবে সেই পরিবারের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর দেবীর অন্য একটি কষ্টিপাথরের মূর্তি এই মন্দিরে বিগ্রহ হিসেবে আনা হয়। শিলার পাশাপাশি সেই কষ্টিপাথরের মূর্তিরও পুজো চলে দেবী মুক্তকেশীর মন্দিরে।

আরও পড়ুন- দমদমে শতবর্ষ প্রাচীন জাগ্রত দেবী বগলামুখীর মন্দির, পূরণ হয় মনস্কামনা

এই মন্দিরের বিশেষত্ব, এখানে দেবীর সঙ্গে রয়েছেন মহাদেব এবং গণেশ। মন্দিরে একটি প্রাচীন ঘটে প্রতিদিন তেল, সিঁদুর লেপা হয়। দেবী মুক্তকেশীর সঙ্গে এই মন্দিরে জগন্নাথের পুজোও করা হয়ে থাকে। মন্দিরে সরস্বতী পুজোর সময়, প্রতি অমাবস্যা, দীপান্বিতায়, জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রায়, রথয়াত্রায় চলে বিশেষ আরাধনা। এই মন্দিরে বহুবার চোরেরা হানা দিয়েছিল। কিন্তু, দেবী মুক্তকেশী অত্যন্ত লীলাময়ী। বিগ্রহের গায়ে প্রচুর দামি গয়না থাকলেও দেবীর কৃপায় চোরেরা কিছুই করতে পারেনি বলেই দাবি ভক্তদের। দেবীকে এই মন্দিরে অন্নভোগ দেওয়া হয়। বিশেষ তিথিতে চলে খিচুড়ি ভোগ। দক্ষিণেশ্বর থেকে বালিখালের অটোয় চেপে সহজেই পৌঁছনো যায় দেবী মুক্তকেশীর মন্দিরে।

Kali Puja Kali Temple pujo
Advertisment