দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য অসহায় মানুষ। যখন বিপদে পড়ে সব রাস্তা বন্ধ, তখন ভরসা বলতে বুড়িমা কালীর মন্দির। গ্রামীণ হাওড়ার খলিশানির বুড়িমা কালীর মন্দিরে তাই কোনওদিন ভিড় কমে না। ৪০০ বছর ধরে ক্রমশই যেন এই মন্দির সম্পর্কে বিশ্বাস বেড়েছে ভক্তদের। অনেকে হয়তো ছোটবেলায় এসেছিলেন মা-বাবার হাত ধরে। এখন আসছেন নাতি-নাতনিদের নিয়ে। এই মন্দিরের অলৌকিক মাহাত্ম্যের কথা সময়ের হাত ধরেই লোকমুখে ছড়িয়েছে।
আগে আসতেন গ্রাম ও তার আশপাশ থেকে। এখন তো দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও ভক্তরা যাতায়াত করছেন এই মন্দিরে। জাতীয় সড়কের কাছে। তাই এই মন্দিরে যাতায়াতও ভক্তদের পক্ষে সুবিধাজনক হয়েছে। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের খলিশানি কালীতলা বাসস্ট্যান্ড। তা থেকে সামান্য পশ্চিমে এগিয়ে গেলে এই মন্দির। ভক্তদের অনেকেই আসেন রোগ-ব্যাধির সমস্যা নিয়ে। কেউ আবার পারিবারিক সমস্যা।
কেউ ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান বা বিয়ের বাসনা নিয়ে আসেন। একেক ভক্তের একেকরকম কামনা-বাসনা। কিন্তু, হলে কী হবে, ভক্তদের বিশ্বাস দেবী এখানে কাউকেই ফেরান না। এমনকী, কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যাধিও নাকি বুড়িমার মন্দিরে যাতায়াত করলে সেরে যায়। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। ভক্তদের কাছে বুড়িমা তাই শুধুমাত্র দেবী নন। কার্যত যেন অভিভাবকের মতই।
আরও পড়ুন- বাংলার মন্দির, যেখানে পৌষের বৃহস্পতিবার পুজো দিলে ঘোচে দারিদ্র, মেলে ধনদেবীর কৃপা
আর, সেই কারণেই স্থানীয় বাসিন্দারা আগে বুড়িমার কাছে পুজো দেন। তারপর যাবতীয় শুভকাজে হাত দেন। এমনকী, এলাকার যত কালীপুজো, সব পুজোকমিটি আগে বুড়িমার কাছে পুজো নিবেদন করে। তারপর নিজেদের পুজো শুরু করে। কথিত আছে, ৪০০ বছর আগে এই জায়গাটি ছিল ডাকাতদের ঠিকানা। যার চারপাশে ছিল ঘন জঙ্গল। সেই সময়ে ডাকাতরাই নাকি এই কালীপুজো শুরু করেছিল।
তবে, আজ আর সেই জঙ্গলও নেই। সেই ডাকাতরাও নেই। কালীপুজোর রাতে এখানে এত ভিড় হয় যে প্রায় তিনধারণের জায়গা থাকে না। এত ভিড়ের মধ্যেও ভক্তরা আসেন। কোনও মন্দিরের কারুকার্য বা আলোকসজ্জা দেখতে নয়। ভক্তদের এই মন্দিরের প্রতি আকর্ষণের একটাই কারণ, জাগ্রত দেবী। যিনি ভক্তের ডাকে সাড়া দেন। ভক্তরা মন দিয়ে চাইলে, সেই কামনা পূরণ করেন।