করোনা পরবর্তীতে মানুষের দৈহিক যেমন অনেক বদল আসছে ঠিক তেমনই বদল আসছে মানসিক স্থিততে। অর্থাৎ, চারিদিকের পরিবেশ, বাড়িতে বসে থাকার বিষয়টি সঙ্গে অসুস্থতা মানুষকে ভাল থাকতে দিচ্ছে না। তবে কোভিডের পরবর্তীতে মানুষ মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, অন্তর বিএমজে জার্নালের তথ্য তাই বলছে।
কম করে ১৫৪,০০০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেই এই পরীক্ষা করা হয়েছে। যারা প্রাথমিক চিকিৎসার কারণে সুস্থ হয়েছিলেন তাদের মধ্যেই দেখা গেছে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের লক্ষণ। গবেষণায় তাদেরই যুক্ত করা হয়েছে যাদের করোনা আক্রান্ত হাওয়ার অন্তত বছর দুয়েক আগে মানসিক স্থিতি ঠিক ছিল, তবে পরবর্তীতে ভাইরাসের কবলে আসার পরেই তাদের মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা যায়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত নয় এমন ব্যক্তিদের তুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯% বেশি বিষন্নতা ধরা পড়েছে। সংক্রমণের পরের মাস গুলোতে এই সম্ভাবনা বেশি প্রায় ৩৫%। কোভিড রোগীদের মধ্যে স্ট্রেস এবং মানিয়ে নেওয়ার মত মানসিক প্রস্তুতি একেবারেই নেই। এবং কম করে ৪১% এর বেশি মানুষ ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের ধারণা ঠিক কেমন?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যার অধ্যাপক পল হ্যারিসন বলছেন করোনা আক্রান্ত হলে তার পরের মাস থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকার আধিক্য রয়েছে। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, কোভিড মস্তিষ্কের এমন এক উদীয়মান প্রতিধ্বনি কে চিহ্নিত করে যা মানুষের সাধারণ স্বাস্থের সঙ্গেও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ফেলতে পারে। জানা গিয়েছে অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্টস গ্রহণ করার সম্ভাবনা যুক্ত ব্যক্তি ৫৫% এবং অ্যান্টি অ্যাংজাইটি এর ওষুধ গ্রহণ করেন ৬৫% মানুষ।
গবেষণা বলছে ১৮% এরও বেশি মানুষ পরবর্তী বছরে নিউরো-সাইকিয়াট্রিক সমস্যায় ভুগছেন। এবং এর মধ্যেও করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনও দেখা গিয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে যত মানুষ ভর্তি হয়েছেন তার থেকে বেশি মানুষ মানসিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের আওতায় পৌঁছেছেন। হালকা সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে এই সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। গবেষণার অন্যতম সদস্য জিয়াদ আল আলি বলছেন অনেক সময় মানুষ রীতিমত তর্ক করেছেন যে হতাশার কারণে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তবে অনেক রোগীই এক সপ্তাহের মত আইসিইউ তে ভর্তি ছিল। সব মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার নেই তবে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন সকলের আছে।
গবেষণায় জড়িত প্রাপ্ত বয়স্কদের ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ড জড়িত, যারা ১লা মার্চ ২০২০ থেকে ১৫ই জানুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন- তাদের মধ্যে বেঁচে আছেন খুব কমজন। ২০২১ এর ৩০শে নভেম্বর এর মধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের টিকা দেওয়ার পরেও দেখা গিয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তন। তার সঙ্গেই দেখা হয়েছে অন্যান্য রোগের কারণেও যদি কোনও সমস্যা থাকে সেই বিষয়টিকে।
পরবর্তীতে অবশ্য জনগণের বৈশিষ্ট্য তথা স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পরিবর্তনশীল কারণগুলির জন্য গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করেছিলেন, অনেকের আবার বছর পরে মানসিক অসুস্থতার কথা শোনা গিয়েছে। চিকিৎসক অধ্যাপক মৌরা বোল্ডরিনি বলছেন এটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য কারণ এরম পরিস্থিতি আমরা লক্ষ্য করেছি। আশ্চর্য এখানেই যারা একেবারেই মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন তারাও এর আওতায় রয়েছে। চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন লক্ষণগুলি সম্ভবত জৈবিক কারণ এবং শারীরিক অসুস্থতা এর সঙ্গেই সম্পর্কিত। অনেকেই আছেন যারা নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করেন, তার কোনও বিশ্লেষণ হয়না, তবে করোনা পরবর্তীতে মানসিক সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।