চাণক্যের সাফল্যের কাহিনি আমরা অনেকেই জানি। তাই তাঁকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলেরও অন্ত নেই। শুধুমাত্র চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে তৈরি করা নয়। মৌর্য সাম্রাজ্যকে কার্যত পিছন থেকে প্রতিষ্ঠা করা। নন্দ বংশকে ধ্বংস করা। আর, ভারতকে এক শক্তিশালী রাজত্ব উপহার দেওয়া। মহামতি চাণক্যের এই সব নানা দিকে বারেবারে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। যেমনভাবে, ছুঁয়ে গিয়েছে, তাঁর নানা নীতিবাক্য এবং অর্থশাস্ত্র। যা আজও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নিজেদের পথের দিশা বলে মনে করেন।
তাঁর এই নীতিশাস্ত্রের মধ্যেই চাণক্য কিন্তু তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়ই দিয়ে গিয়েছেন। আবার এমনটাও মনে করেন অনেকেই। যেমন, চাণক্য এক নীতিবাক্যে বলেছেন- 'ন চ বিদ্যাসমো বন্ধু র্ন চ ব্যাধিসমো রিপুঃ। ন চাপত্যসমঃ স্নেহ ন চ দৈবাৎ পরম বলম।' যার বাংলা তর্জমা করলে হয়- বিদ্যার সমান বন্ধু নেই। আবার রোগের সমান শত্রু নেই। পুত্রস্নেহের সমান স্নেহ নেই। আর, দৈবের চেয়ে বড় বল নেই।
তাঁর অন্যান্য শ্লোকেও দেখা গিয়েছে, বিদ্যার প্রতি বিশেষ জোর দিতে। তিনি বারবার বলেছেন, যদি কোনও মানুষের বিদ্যাশিক্ষা থাকে, তবে তিনি যে কোনও জটিল পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারেন। তাই বিদ্যাই হল মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। যে তাঁকে কোনও অবস্থাতেই ছেড়ে যায় না। একইসঙ্গে ওপরের নীতিবাক্যে চাণক্য মানুষকে স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও সচেতন করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন রোগ বা ব্যাধির সমান দুঃখ নেই। আর, রোগগ্রস্ত ব্যক্তি জীবনে বিশেষ সফলতা পেতে পারে না।
আরও পড়ুন- চাণক্যের এই উপদেশ, যা মানলে সঙ্গী বাছতে ভুল হবে না আপনার
একইসঙ্গে চাণক্য সন্তানস্নেহের প্রসঙ্গও তুলেছেন। বলেছেন যে সন্তানের প্রতি স্নেহের মত দুর্লভ স্নেহ আর হয় না। কারণ, মানুষ সন্তানের মধ্যেই তাঁর ফেলে আসা দিনকে খুঁজে পায়। মানুষ নিজেকেই সব থেকে বেশি ভালোবাসে। আর, সেই কারণেই সে সন্তানকে ভালোবাসে। তবে, চাণক্য তাঁর নীতিবাক্যে যেটা বলে গিয়েছেন, তা হল- প্রকৃতির সব কিছুই দৈব নির্ধারিত। দৈবই সবথেকে বড় শক্তি। আমরা এমন অনেক কাজ করি, যাতে চেষ্টার কোনও খামতি থাকে না। তারপরও দেখা যায়, সেই কাজ সফল হয় না। এর পিছনে শুধু একটা কথাই বলা যেতে পারে, দৈব নির্ধারিত কারণেই কাজটি সফল হল না। চাণক্যের এই বক্তব্য যে তাঁর আস্তিক মনোভাবের পরিচয়, তা অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না।