শৈবতীর্থ বক্রেশ্বর। কিন্তু, বক্রেশ্বর শুধুমাত্র শৈবতীর্থই নয়। এটা সতীপীঠও। এখানে দেবী সতীর দুই ভ্রু-র মধ্যস্থল বা তৃতীয় নয়ন পড়েছিল বলে মনে করা হয়। আর, তাই বক্রেশ্বর ৫১ পীঠের এক পীঠ। এখানে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা রূপে সিংহবাহিনী। আগে এখানে দেবী কষ্ঠিপাথররূপে পূজিতা হতেন। পরে স্থানীয় সিদ্ধপুরুষ খাকিবাবা এখানে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি স্থাপন করেন।
এখানে দেবী দুর্গাকে নিত্যপুজো করা হয়। প্রতিদিনই দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। আয়োজন থাকে সন্ধ্যা আরতিরও। বাংলাদেশের ঢাকেশ্বরী এবং বক্রেশ্বরের দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনীর একই রূপ বলেই দাবি ভক্তদের। অনেকে একে গৌড়দেশের গুপ্তকাশীও বলে থাকেন।
শারদীয়া দুর্গাপুজোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গাকে পরানো হয় বেনারসি শাড়ি। সাজানো হয় ফুল-মালা ও সোনার অলঙ্কার দিয়ে। দেবীকে দেওয়া হয় ফল ও পায়েস ভোগ। সপ্তমীতে দেবীর মহাভোগের মধ্যে থাকে সুজি, চিঁড়ে, দই। অষ্টমীতে দেবীকে চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়।
নবমীতে দেবীকে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, আজও এখানে পাঁঠা বলি দেওয়ার রীতি আছে। দেবীকে খিচুড়ি ও মহাভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে বিশেষ পুজোর সমাপ্তি ঘটে। দুর্গাপুজোর সময়ে বিশেষ পুজোর জন্য এখানে বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমাগম হয়। নবমীতে প্রায় হাজার চারেক ভক্ত এখানে মহাপ্রসাদ পান। দুর্গাপুজোর চারদিন গর্ভগৃহে ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে।
আরও পড়ুন- শুধু শিল্পের দেবতাই নন, সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী বিশ্বকর্মা কি নিজেই ব্রহ্মা?
বক্রেশ্বর মন্দিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বা আকর্ষণ এখানকার ১০টি উষ্ণ প্রস্রবণ বা কুণ্ড। এই কুণ্ডগুলো হল পাপহরা গঙ্গা, বৈতরণী গঙ্গা, খরকুণ্ড, ভৈরবকুণ্ড, অগ্নিকুণ্ড, দুধকুণ্ড, সূর্যকুণ্ড, শ্বেতগঙ্গা, ব্রহ্মাকুণ্ড ও অমৃতকুণ্ড। এর মধ্যে সূর্যকুণ্ডের জলের তাপমাত্রা ৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভৈরবকুণ্ডের জলের তাপমাত্রা ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর খরকুণ্ডের জলের তাপমাত্রা ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দুধকুণ্ডের জলের তাপমাত্রাও ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সবচেয়ে বেশি অগ্নিকুণ্ডের জলের তাপমাত্রা। এর তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সব কুণ্ডের জলে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বোনেট, সালফেটের মত নানা রাসায়নিক পাওয়া যায়। যার মধ্যে ঔষধিগুণ আছে বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। এছাড়া এখানকার কুণ্ডের জলে রেডিও অ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে বলেও ভক্তদের বিশ্বাস।