নবদুর্গার তৃতীয় রূপ দেবী চন্দ্রঘণ্টা। আশ্বিন এবং চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করেন ভক্তরা। কথিত আছে, শিব ও পার্বতীর বিয়ের সময় তারকাসুর সেই বিয়ে রোধ করার চেষ্টা করেছিল। সেজন্য পিশাচ, দৈত্য, দানব, প্রেতকে পাঠিয়েছিল। তাদের ঠেকাতে দেবী পার্বতী চন্দ্রঘণ্টা রূপ ধারণ করেছিলেন।
আর, চাঁদের মত বিশাল ও সাদা ঘণ্টা বাজিয়ে সব দৈত্য, ভূত, প্রেতকে তাড়িয়েছিলেন। আবার অন্যমতে, বিয়ের সময় শিব চণ্ড রূপ ধারণ করায় দেবী মেনকা মূর্ছা গিয়েছিলেন। তখন দেবী পার্বতী চন্দ্রঘণ্টা রূপ ধারণ করেন। যা দেখে শিব ভীত হন ও চণ্ড রূপ ত্যাগ করে বিয়ের জন্য অপূর্ব বস্ত্র পরিধান করেন।
দেবী চন্দ্রঘণ্টার যে রূপ প্রচলিত রয়েছে, তা হল দেবী সিংহবাহিনী। তিনি দশভুজা। তাঁর দশ হাতে দশটি অস্ত্র। দেবীর দেহের বর্ণ সোনার মত উজ্জ্বল। তাঁর পরনে লালরঙের শাড়ি আর পরনে নানারকম অলংকার। দেবীর ধ্যানমন্ত্র হল- 'বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্। সিংহারূঢাং দশভুজাঞ্চন্দ্রঘণ্টাং য়শস্বনীম্।। কঞ্জনাভাং মণিপুরস্থিতাং তৃতীয়দুর্গাং ত্রিনেত্রাম্। খড্গগদাত্রিশূলচাপধরাং পদ্মকমণ্ডলুমালাবরাভয়করাম্। পটাম্বরপরিধানাং মৃদুহাস্যাং নানালঙ্কারভূষিতাম্। মঞ্জীর-হার-কেয়ূর-কিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্।। প্রফুল্লবন্দনাং বিম্বাধারাং কান্তঙ্কপোলাং তুঙ্গকুচাম্। কমনীয়াং লাবণ্যাং ক্ষীণকটিং নিতম্বনীম্।।'
আরও পড়ুন- নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে পূজিতা হন দেবী ব্রহ্মচারিণী, তাঁর আরাধনায় কী পান ভক্তরা ?
দেবী চন্দ্রঘণ্টা অশুভের বিনাশকারিণী। তিনি তেজস্বরূপা। তাঁর মধ্যে পরমাশক্তি রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে করুণা, ন্যায় ও পরমার্থিক শান্তি প্রদানকারিণী শক্তি। দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করলে সমস্ত অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
কাশী বা বারাণসীতে দেবী চন্দ্রঘণ্টার মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটি রয়েছে লক্ষ্মী চৌতারার চন্দুনাউয়ের গলিতে। দেবীর মন্দিরটি খুব বেশি বড় না। দেবীর বিগ্রহের উচ্চতাও খুব একটা বেশি নয়, একহাতের মত। দেবীর বিগ্রহের কাছেই রয়েছে বড়়মাপের একটা ঘণ্টা। কাশীর এই মন্দিরে দেবী চন্দ্রঘণ্টাকে পিছন থেকে ঘিরে রয়েছে নবদুর্গার অন্য দেবীদের আটটি ছোট বিগ্রহ। আশ্বিনের দুর্গাপূজা ও চৈত্রের বাসন্তীপূজার সময় নবরাত্রি উপলক্ষে এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্তসমাগম হয়।