জীবনে কোনও কোনও দিন বা সময় আসে, যা অত্যন্ত শুভ। আমরা অনেকেই তা জানি না। শুধু তাই নয়, সেই বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু রীতি পালন ম্যাজিকের মত করতে পারে আমাদের ইচ্ছাপূরণ। এমনটাই মনে করে জ্যোতিষ ও তন্ত্রশাস্ত্র। তেমনই একটি দিন আজ উপস্থিত। কারণ, আজ উৎপন্না একাদশী। ভগবান বিষ্ণুর কন্যা উৎপন্না। অগ্রহায়ণের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে তাঁর জন্ম হয়েছিল। সেই কারণে এই একাদশী পরম পবিত্র ও দেবতাদের অত্যন্ত প্রিয়। কীভাবে উৎপন্নার জন্ম হয়েছিল অর্জুনকে তা জানিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
তিনি বলেছিলেন, সত্য যুগে 'মুর' নামে এক দানব ছিল। অদ্ভূত আকৃতি বিশিষ্ট সেই দানব দেবতাদের এমনকী দেবরাজ ইন্দ্রকে পর্যন্ত পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিল। তখন দেবতারা মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের দুঃখের কথা জানান। শুনে মহাদেব তাঁদের বিষ্ণুর কাছে পাঠান। মহাদেবের কথামতো দেবতাদের নিয়ে ইন্দ্রদেব ক্ষীরসাগরে বিষ্ণুর কাছে যান। সেখানে জানান, প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙঘা নামে এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল। তারই পুত্র মুর চন্দ্রাবতী রাজপ্রাসাদে বাস করে। সে স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতাড়িত করে দেবলোক অধিকার করেছে।
ইন্দ্রের কথা শুনে বিষ্ণু যান মুরকে বধ করতে। কিন্তু, তুমুল যুদ্ধে দেবতারা হেরে যান। একা বিষ্ণুই যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু, তিনি সুদর্শন চক্রের সাহায্যে অসুরদের সব যোদ্ধাকে হত্যা করেন। একমাত্র মুর দানবই জীবিত থাকে। সে বিষ্ণুকেও হারিয়ে দেয়। অস্ত্র দিয়ে মুরকে কিছু করতে না-পেরে বিষ্ণু তখন ওই দৈত্যের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। কিন্তু, সেই যুদ্ধেও তিনি মুরকে হারাতে পারেননি। এরপর উভয়ের যখন ক্লান্ত বিষ্ণু চলে আসেন বদরিকা আশ্রমে। সেখানে সিংহাবতী গুহায় ঢুকে পড়েন। এই গুহা এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারোযোজন অর্থাৎ ছিয়াশি মাইল লম্বা। বিষ্ণু সেই গুহায় চলতে চলতে ঘুমিয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন- সিঁথির জাগ্রত গ্রহরাজ মন্দির, ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে প্রার্থনা করলে পূরণ করেন শনিদেব
তাকে ধাওয়া করে আসছিল মুর দৈত্য। সে বিষ্ণুকে ঘুমন্ত দেখে, তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। আচমকা দেখা যায়, বিষ্ণুর শরীর থেকে এক কন্যার জন্ম নেয়। সেই কন্যাই 'উৎপন্না'। তিনি রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী, দিব্য অস্ত্রধারিণী ও মহাপরাক্রমশালী। উৎপন্নার সঙ্গে মুরের ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে উৎপন্না মুরকে জ্বালিয়ে দেয়। এই সময় বিষ্ণু ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তিনি উৎপন্নাকে বলেন যে, 'আমার থেকে তোমার জন্ম হয়েছে। তুমি একাদশীতে জন্মেছ। তাই উৎপন্নার সঙ্গে তোমার নাম হবে একাদশীও।'
একইসঙ্গে ভগবান বিষ্ণু জানান, উৎপন্না একাদশী পালন করলে ত্রিভুবনের সর্বত্র পালনকারীর বিঘ্ন কেটে যাবে। উৎপন্নার কৃপায় সে সব পাবে। পালনকারীর সবেতেই সিদ্ধিলাভ হবে। মনের সব বাসনা পূর্ণ হবে। ব্রত পালনকারীর শত্রুনাশ হবে। আজ রবিবার, ২০/১১/২২ সেই বিশেষ দিন উৎপন্না একাদশী। পরদিন পারণ সকাল ০৬:১৭-০৯:৫৫ (বাংলাদেশ), ০৫:৫৩-০৯:৩৩ (ভারত) পর্যন্ত।