শুধুই না পাওয়ার আক্ষেপ নাকি অতিরিক্ত মাত্রায় পেতে শুরু করলেই, সেটিকে বজায় রাখতে না পারার যন্ত্রণা, অল্পবয়সীদের মধ্যে অবসাদ, আত্মহত্যার চেষ্টা - এর কারণ আসলে কী? ছোট ছোট কারণে জীবনে এমন কিছু সিদ্ধান্ত যা পুনরায় ঠিক করা একেবারেই সম্ভব নয়! বিলাসিতা নাকি সুপ্ত জেদ এবং বাসনা? এর কারণ কী? জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তথা বিশেষ শিক্ষাবিদ মৌমিতা গঙ্গোপাধ্যায়।
ডিপ্রেশন কেন হয়, এই নিয়ে কী বলবেন? তিনি বললেন, “ডিপ্রেশন তো অনেক কারণেই হয় তবে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তববাদী না হওয়া এর অন্যতম কারণ। একজন মানুষকে ভীষণ সাধারণ জীবন যাপন করার বিষয় শেখাতে হয়। বেলাগাম জীবনযাত্রা খুব খারাপ, অবশ্যই রাশ টানা দরকার।”
টলিউডে এবং সিনেমা জগতে সমানে এই ধরনের খবর শোনা যাচ্ছে? এগুলো তো ডিপ্রেশন কিংবা মানসিক চাপই!
প্রতিটা পেশা আলাদা। মনোবিদ বলেন, "রঙিন দুনিয়ায় সবকিছুই আলাদা। কিন্তু পেশা আলাদা হলেও মানসিক চাপের কারণ সকলের ক্ষেত্রে একই। জীবনকে সেই ভাবে চালনা করতে হয়। যখনই মনে হবে আর পারছি না কিংবা সম্ভব হচ্ছে না অথবা এমন কিছু যদি কাছের মানুষ আন্দাজ করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন কারণ কোনও কিছুর মূল্যই জীবন হতে পারে না।"
তার সঙ্গেই তিনি আরও বললেন, "সকলের নিজের জীবনে রাশ টানা দরকার। আমার কী এবং কতটা করা উচিত সেটা জানা দরকার। বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা কিন্তু এটা জানি কোনটা তাদের পছন্দ আবার কোনটা নয়। রঙিন দুনিয়ার কথা বলতে হলে এটাই বলব, বলিউডে অক্ষয় কুমার রয়েছেন। তাঁর জীবনযাত্রার ধরণ একেবারেই আলাদা, উনিও তো যথেষ্ট সফল। আর এই অল্প বয়সেই সাফল্য ধরে রাখতে না পারলে, অবসাদে ভুগলে খুব মুশকিল। সম্পর্ক কিংবা জীবনকে কীভাবে একজন মানুষ চালনা করবেন এটা কিন্তু নিজেকে জানতে হবে।"
এখন চারিদিকে ডিপ্রেশন, কিছু হলেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক ধরনের জেদ, তার বহিঃপ্রকাশ, এবং সব শেষে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে হঠাৎ এই বিষয়ের এত বাড়বাড়ন্ত কেন? উত্তরে মনোবিদ এবং চিকিৎসক জানান, "অতীতে একটা সময় ছিল যেখানে সবকিছুই খুব সাধারণ ছিল, যাকে আমরা 'Normal life' বলতাম। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলো কিংবা সকলের সঙ্গে মেলামেশা খুব একটা বিলাসিতার জায়গা ছিল না। কিন্তু এখন সেটা অনেকটা বেড়েছে। জন্মাবার পর থেকেই ওরা, মায়ের সঙ্গে শপিং মলে যায়, সেভাবে কারওর সঙ্গে মেশে না। যতটুকু দরকার ততটাই ভাল, জীবন আসলে সাদামাটা কিন্তু অত্যন্ত উচ্চ চিন্তাভাবনা পরবর্তীতে লোভের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বাচ্চাদের ওপর প্রভাব পড়ে মারাত্মক। কারণ ওরা ছোট থেকে যেটা পেয়ে এসেছে সেটা যদি কেউ পরবর্তীতে না পায় তবে এমন কিছু ঘটবেই।"
বাবা মায়ের কতটা ভূমিকা থাকা উচিত?
"বাবা মায়ের ভূমিকা সবথেকে বেশি থাকা উচিত। ওঁদের কারণেই আমরা বড় হয়ে উঠি। চাকচিক্য কমিয়ে নিজেকে সাদামাটা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ সব বাবা মায়ের দেওয়া উচিত। সবথেকে বড় কথা সবকিছুর মূল্য - আর্থিক বলুন অথবা সময়ের, কিছু পেতে গেলে কতটা কষ্ট করতে হয়, সাফল্য কীভাবে ধরে রাখতে হয়, এগুলো শেখানো দরকার। এই যেমন ধরুন, আর মাধবন। উনি নিজেও খুব সাধারণ তেমনই ছেলেটাকে ভীষণ ভাল তৈরি করেছেন। রঙিন দুনিয়ায় থেকে, অন্তত এই সময়ে সত্যিই প্রশংসা করা উচিত।"
উপায় কী তাহলে?
মনোবিদের বক্তব্য, "ধৈর্য হারালে চলবে না। একে ওকে দেখে সেটাও ইচ্ছে হল, এগুলো করবেন না। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কিন্তু খুব মুশকিল। আর যেমন, সমস্যা আসবেই। বয়স ভেদে সমস্যা আলাদা হবে। সেগুলোকে সমাধান করতে জানতে হবে। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবনের আড়ম্বর বাদ দিতে হবে। এবং ওই ছোট থেকে বড় হয়ে এই হতে হবে ওই হতে হবে কিংবা প্রচুর পয়সা উপার্জন করতেই হবে এগুলো কিন্তু একধরনের ধারণা তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। আকাঙ্ক্ষা যদি সময়মতো পূরণ না হয় মানুষ ভুলভাল পথ বেছে নিতে বাধ্য।"