Advertisment

ব্যস্ত শহরে রোগীর বাহন এক অভিনব অ্যাম্বুলেন্স

"পেডেলে জোর দিয়ে নিজের রোগীকে নিজেই নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। এইটুকু বোধ হয় করাই যায়। কাজ হয়ে গেলে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে যেতে হয়।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

খুব সাধারণ তিনচাকার গাড়ি। যাকে শুদ্ধ বাংলায় আমরা 'ভ্যান রিক্সা' বলি। শহরের মহম্মদ আলি পার্ক অঞ্চলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দৌলতে এই সামান্য বাহনটি হয়ে উঠেছে একটি জীবনদায়ী অ্যাম্বুলেন্স। তফাৎ একটাই, এই অ্যাম্বুলেন্সের কোনও চালক নেই, যাঁর প্রয়োজন তিনিই চালিয়ে নিয়ে যাবেন। সমগ্র ভাবনার পেছনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম হক ফাউন্ডেশন।

Advertisment

"পুজোর সময় রাত দুটো, বাবা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাজার ফোন করেও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন এই তিন চাকার অ্যাম্বুলেন্সের জন্যই সম্ভব হয় বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া," এলাকাবাসী শামসুরউদ্দিন। আরেক এলাকাবাসী জাকির শাহ বলেন, "মহম্মদ আলি পার্ক চত্বরে বাজার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক বছর ষাটের বৃদ্ধ, মেডিক্যাল কলেজ অবধি পৌঁছে দেয় এই তিন চাকার অ্যাম্বুলেন্স।"

আরও পড়ুন: সরকারি উদ্যোগে প্রথমবার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীর বর্তমান ঠিকানা, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল

অভিনব এই অ্যাম্বুলেন্স ডাকার জন্য প্রয়োজন শুধু একটি ফোন কলের। কিন্তু সংখ্যা যেহেতু এক, তাই এটি পেতে গেলে হয়তো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

publive-image নিজেকেই চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে এই ত্রিচক্রযান

"চালকের ভাড়া গুনতে গেলে অতিরিক্ত খরচ বইতে হবে। পেডেলে জোর দিয়ে নিজের রোগীকে নিজেকেই নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। এইটুকু বোধহয় করাই যায়। কাজ হয়ে গেলে এটিকে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে যেতে হয়," বলেন হক ফাউন্ডেশনের সদস্য ওয়াকিল আহমেদ খান।

আরও পড়ুন: সিদ্ধার্থের মধ্যে ভগবান দেখছে ওরা

কী ভাবে হঠাৎ এরকম অ্যাম্বুলেন্সের কথা মাথায় এল ? এই প্রশ্নে জানান আমাদের মহম্মদালি পার্কের ভিতরের এলাকা খুব ঘিঞ্জি। যার ফলে সহজে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না এবং গাড়ি ঘোরাতে , রোগী অবধি পৌঁছাতে সময় লেগে যায়। তখন খেয়ালে আসে যে ভাবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভ্যানে করে স্কুলে যায় সেরকম একটি ভ্যানকে যদি অ্যাম্বুলেন্স বানানো যায়। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। হাক সংগঠন থেকে তৈরি করা হয় তিন চাকার অ্যাম্বুলেন্স।

আরও পড়ুন: ভাষা উদ্যানে হারিয়ে গিয়েছে ‘পরশ পাথর’

সংগঠনের প্রধান আইনজীবী এমএম বক্স এবং সকল সদস্যের সঙ্গে মিটিং করে এই অ্যাম্বুলেন্স বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র যে মহম্মদ আলি পার্কের বাসিন্দারাই এই অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধে পাবেন এমনটা নয়। বাইরের লোকজনও ব্যবহার করতে পারেন এই ভ্যান অ্যাম্বুলেন্স। মূলত এলাকার জন্যই রাখা হয়েছিল, কিন্তু যত লোক চিনেছেন, তত বাইরের মানুষও ব্যবহার করছেন এই অ্যাম্বুলেন্স।

আরও পড়ুন: খিদের কবল থেকে মুক্তি

ওয়াকিল আরও বলেন, "অ্যাম্বুলেন্সে কোনও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, যেমন স্যালাইন বা ফার্স্ট এইড, নেই। প্রয়োজন হলে সংগঠন যোগাড় করে দেয়। সংগঠনের সকলে মাসে ১০০ টাকা করে জমা করেন এই অ্যাম্বুলেন্সের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য। কোনোরকম চাঁদা বা অনুদানের ব্যবস্থা নেই। নিজেদের তাগিদেই এই অ্যাম্বুলেন্সের খরচ যোগাই আমরা।"

এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি বানাতে। রক্ষণাবেক্ষণের মাসিক খরচ আনুমানিক ৫০০ টাকা।

publive-image সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে অ্যাম্বুলেন্স

কোথাও নিয়ে গেলে অনেকেই উঁকিঝুকি দিয়ে দেখেন। কারণ এর আগে এরকম অ্যাম্বুলেন্স কলকাতা শহরে কেউ দেখেন নি। রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও প্রথমে বুঝতে পারেন নি, তারপর তাঁরাও একটু অবাকই হয়েছিলেন। পাড়ার লোক অবশ্য আর অবাক হন না। জানেন, বিপদের বন্ধু রয়েছে একটি ফোন কলের দূরত্বেই।

calcutta medical college
Advertisment