অন্য পুজো: গঙ্গামাটির টানে কেটেছে বারোটি শরৎ

অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার সময় মনে থাকুক বারো বছরের সম্রাটের কথা। যার পরিবারের পেট চলে গঙ্গামাটি বেচে। যে এবছর মাটি বিক্রির টাকা দিয়ে ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দেবে।

অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার সময় মনে থাকুক বারো বছরের সম্রাটের কথা। যার পরিবারের পেট চলে গঙ্গামাটি বেচে। যে এবছর মাটি বিক্রির টাকা দিয়ে ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দেবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নাম সম্রাট কর্মকার। বয়স বারো বছর। কোনওদিন স্কুল যায়নি। ছোটবেলা থেকে মায়ের হাত ধরে গঙ্গার পারে আসে। আগে তার মা পুজোর জন্যে গঙ্গা মাটি তুলতেন, কিন্তু বছর দুয়েক ধরে এ কাজ সে নিজেই করছে। এ বছরের পুজোয় এখনও তার একটাও জামা হয় নি, আর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই বিশেষ। পঞ্চমী আর ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যেবেলা বন্ধুদের সাথে সে তার পুরনো জামা পরেই বেরিয়েছে।

Advertisment

publive-image সম্রাটের মা ও বোন। ছবি: শশী ঘোষ

পঞ্চমীর দিন সকাল থেকে মা আর তার ছোট বোনের সঙ্গে গঙ্গার ঘাটে চলে আসছে। গঙ্গামাটি তুলে এনে জমা করছে। আর মা শিউলি কর্মকার সে সব মাটির তাল বানিয়ে বিক্রি করছেন। মায়ের কোলে এক বছরের ছোট বোনও আছে। সপ্তমীর সকালে পুজোর জন্যে কলাবউ স্নানের বেশ তোড়জোড় চলে। সে সময় অনেকে গঙ্গা মাটি কিনে নিয়ে যান। গঙ্গা মাটির এক একটা গোলার দাম ৫ থেকে ১০ টাকা। যত বেশি মাটি বিক্রি করতে পারবে তত লাভ। গঙ্গায় ভাটার সময় সম্রাট যত পারে মাটি তুলে এনে জড়ো করার চেষ্টা করে, যাতে অনেক অনেক মাটি বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করা যায়।

Durga Puja 2018 "আমার গঙ্গামাটি নিয়ে খেলতে বেশ লাগে।" ছবি: শশী ঘোষ

Advertisment

গঙ্গামাটি তুলতে তুলতে সম্রাট হেসে বলে, "ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে আসি গঙ্গার পারে। আমার মাটি নিয়ে খেলা করতে বেশ লাগে। মাটি তুলে তার দলা পাকাতে মজা লাগে।" এবছর পুজোতে তার জামা হয়নি বলে কোনও আক্ষেপ নেই। যা মাটি বিক্রি হয়েছে, তার থেকে টাকা জমিয়ে ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দেবে সে।

বছরের বাকি দিনগুলোতে গঙ্গামাটির তেমন একটা প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু পুজোর সময় গঙ্গামাটির ভারী চাহিদা, তাই এসময় কিছু রোজগারের মুখ দেখা যায়। সম্রাটের মায়ের কথায়, "অভাবের সংসারে কিছু তো করার থাকে না। সম্রাটের বাবা মদ খেয়ে পড়ে থাকে। কোলে এক বছরের বাচ্চা, চারটে পেট চালানো একার পক্ষে সম্ভব না। তাই বাচ্চা কোলে নিয়ে চলে আসি। আমার ছেলে আমার অনেক সাহায্য করে, কোনোরকম বায়না নেই। পুজর দিনগুলোতে ভোর হতেই রোজ সকালে খালি পেটে তিনজনে চলে আসি।"

publive-image আগে গঙ্গামাটির চাহিদা থাকতো বছরভর, এখন অন্য গল্প। ছবি: শশী ঘোষ

প্রসঙ্গত, গঙ্গামাটির চাহিদা আগে সারা বছর থাকত, কিন্তু এখন আর কিছুই তেমন নেই। দশকর্মা ভাণ্ডারেই গঙ্গামাটি পাওয়া যায়, যদিও সে গঙ্গামাটি অনেক সময়ই আসল হয় না। অনেকে পুকুরের মাটিকেই গঙ্গামাটি বলে চালিয়ে দেয়। আর তার দামও হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা।

Durga Puja 2019