Advertisment

ব্রিটেনের বিশ্বজয়ীর নেতৃত্বে বরফ সাম্রাজ্য অভিযানে দুই ভারতীয় কন্যা

বয়স ২৪ থেকে ৭৪। মিশন দক্ষিণ মেরু। অসাধ্য সাধনের গল্প লিখতে চলেছেন জ্যানিস মিক, এলিন ক্রিন, ক্যারোলাইন জেরার্টস, ডেনিস মার্টিন, তনভি বুচ ও মাধবীলতা মিত্র।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
women Expidition Express Photo Shashi Ghosh

ব্রিটেনের বিশ্বজয়ীর নেতৃত্বে বরফসাম্রাজ্য় অভিযানে দুই ভারতীয় কন্যা। ছবি: শশী ঘোষ

বয়স ২৪ থেকে ৭৪। মিশন দক্ষিণ মেরু। অভিযাত্রীরা প্রত্যেকেই মহিলা। না, রিল লাইফের কোনও চিত্রনাট্য নয় এটা। রিয়েল লাইফে অসাধ্য সাধনের রূপকথার গল্প লিখতে চলেছেন জ্যানিস মিক, এলিন ক্রিন, ক্যারোলাইন জেরার্টস, ডেনিস মার্টিন, তনভি বুচ ও মাধবীলতা মিত্র। আসন্ন ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে আন্টার্কটিকায় পা রাখবেন তাঁরা। দক্ষিণ মেরু ছুঁতে বদ্ধপরিকর চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী প্রমীলাবাহিনি। দলের দুই ভারতীয় মুম্বইয়ের তনভি ও কলকাতার মাধবীলতা।

Advertisment

অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে তৈরি হয়েছে টিম ‘পোলার মেডেনস’। যারা বরফ সাম্রাজ্যে নিজেদের ছাপ রেখে আসতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশ্বের শীতলতম, শুষ্কতম মহাদেশে যারা যাচ্ছেন তাঁদের বায়োডেটাও রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। পোলার মেডেনসের ক্যাপ্টেন জ্যানিস নিজেই চারবারের বিশ্বরেকর্ডধারী। উত্তর মেরুতে একবার নয়, দু’বার অভিযান (ম্যাগনেটিক ২০০৭, জিওগ্রাফিক ২০০৮) করে আসার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ‌

জ্যানিসের এখন ৭৪ বছর বয়স। তাঁর শরীরী ভাষা এবং ফিটনেস যে কোনও তরুণকে চ্যালেঞ্জে জানাতে পারে। বয়স তাঁর কাছে শুধুই একটা সংখ্যা মাত্র। বলছেন, "অভিযাত্রীদের কাছে দক্ষিণ মেরু হোলি গ্রেল। বিশ্বের শীতলতম ও শুষ্কতম জায়গায় পা রাখতে আমি মরিয়া। শুধু ভালো খাওয়াদাওয়া আর সঠিক শরীরচর্চায় অসাধ্য সাধন সম্ভব। বয়স কোনও ব্যাপার নয় এখানে।"

Women Expidition Express photo Shashi Ghoshwomen expidition-4-00 জ্যানিস মিক। ছবি: শশী ঘোষ

১৯৯৭-তে জ্যানিস প্রথম আটলান্টিক রোয়িং রেসে অংশ নিয়েছিলেন। ২৩ ফুটের কাঠের রোয়িং বোটে চেপে ছেলে ড্যানিয়েল বাইলসের সঙ্গে ১০১ দিনে ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ফের জ্যানিস ও ড্যানিয়েল ব্রিটিশ পর্বতারোহী রিচার্ড প্রফিটের সঙ্গে ম্যাগনেটিক উত্তর মেরুতে গিয়েছিলেন। ২০ দিন ও পাঁচ ঘণ্টার সেই সফরে তাঁরা হেঁটে এবং স্কি করে ৫৬০ কিমি অতিক্রম করেছিলেন। কানাডার নুনাভুটের রেসোলিউট থেকে শুরু করেছিলেন তাঁরা।

১৯৯৭-৯৮-তে জ্যানিস ৫৩ বছর বয়সে সমুদ্র রোয়িং করে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। প্রবীনতম হিসেবেই এই নজির গড়েছিলেন তিনি। যদিও বর্তমানে এই রেকর্ডটি পাভেন রেজভয়ে, যিনি ৬৬ বছর বয়সে সমুদ্রে রোয়িং করেছেন। জ্যানিসের দখলে এখনও তিনটি রেকর্ড রয়েছে। ২০০৬-তে জ্যানিস ও ড্যানিয়েলকে গিনেস বিশ্বরেকর্ডের সার্টিফিকেট দিয়েছিল, ১৯৯৭-৯৮-তে প্রথম মা ও ছেলে হিসেবে মহাসাগর রোয়িং করেন তাঁরা। ২০০৭-এর এপ্রিল-মে’তে জ্যানিস-ড্যানিয়েল প্রথম মা ও ছেলে হিসেবে হেঁটে বা স্কি করে মেরু অভিযানের কীর্তি গড়েন। ২০০৮-এর গিনেসের বইতে তাঁদের কথা বলা হয়েছিল। ২০০৮-এ জ্যানিস প্রবীনতম মহিলা হিসেবে হেঁটে বা স্কি করে ম্যাগনেটিক উত্তর মেরুতে যাওয়ান নজির গড়েন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬২। পেশায় মোটিভেশনল স্পিকার জ্যানিস বলছেন, "এবার আমরা দক্ষিণ মেরু অভিযানে সফল হবই।"

Women Expidition Express photo Shashi Ghoshwomen expidition-5-002 তনভি বুচ। ছবি: শশী ঘোষ

পোলার মেডেনসে রয়েছে আয়ারল্যান্ডের এলিন ক্রিন। তাঁর ঠাকুরদা টম ক্রিনের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন সফল করতেই দক্ষিণ মেরু যাচ্ছেন তিনি। টমের সফর মাঝপথেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কানাডার ডেনিস মার্টিন ছাড়াও রয়েছেন ক্যারোলাইন জেরার্টস। যাঁর বয়স ৬০। ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছেন তিনি। এই দলের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট তনভি বুচ। বছর চব্বিশের মুম্বইয়ের নিবাসী ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ন্যাচরাল রিসোর্স কনসারভেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ইন্টার্নশিপ করার কথা ভাবছিলেন তিনি। তখনই তাঁর কাছে মেরু অভিযানের প্রস্তাব আসে। তনভি বলছেন, “আমি খুব উত্তেজিত। কয়েক দিন আগেও জানতাম না, এই অভিযানে সামিল হব। আগে ট্রেকিং আর স্নো ক্যাম্প করেছি সুযোগ পেলেই। এবার একেবারে আলাদা অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।” তনভি যদি সফল ভাবে দক্ষিণ মেরু অভিযান করে আসতে পারেন তাহলে তিনিই হবেন দেশের নবীনতম।

Women Expidition Express photo Shashi Ghoshwomen expidition-3-003 মাধবীলতা মিত্র। ছবি: শশী ঘোষ।

এই দলে থাকছেন কলকাতার বিখ্যাত মডেল মাধবীলতা মিত্র। মডেলিংয়ের বাইরেও অ্যাডভেঞ্চারের নেশা তাঁর। দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (এইচএমআই) থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া মাধবী সদ্যই রেসকিউয়ের উপরেও কোর্স করে এসেছেন। রীতিমত পর্বতারোহণ ও ট্রেকিং করেন। বলছেন, "বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমরা দক্ষিণ মেরুতে যাচ্ছি। ছোটবেলায় ইগলু, স্লেজের গল্প শুনেছি। ছ’মাস দিন, ছ’মাস রাত ওখানে। ভেবেই রোমাঞ্চিত আমি।"

আন্টার্কটিকায় ‘লাস্ট ডিগ্রি স্কি’ (৮৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণ মেরু) করার ভাবনা পোলার মেডেনসের। প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখবেন না তাঁরা। সেপ্টেম্বরের ১-৯ পর্যন্ত স্কটল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নেবেন। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরবেন। এরপর আন্টার্কটিকায় গিয়ে ইউনিয়ন গ্লেসিয়ার ক্যাম্প করবেন। ২০ দিনের অভিযানে প্রায় ১৪০ মাইল পথ অতিক্রম করবে টিম পোলার মেডেনস।

kolkata news south pole Antarctica expedition
Advertisment