কেউ বড় অভিমান নিয়ে বলেছিল 'সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহর'। কংক্রিটে মোড়া কলকাতা আজ বড় প্রাণহীন ঠেকে অনেকের কাছেই। গাছ নেই, পাখি নেই, বর্ষায় কাদা প্যাচপ্যাচে মাঠে হৈহৈ-ফুটবল নেই। একের পর এক আবেগ গিয়ে নাম লিখিয়েছে হারিয়ে যাওয়ার তালিকায়। ইট-কাঠ-পাথর আর শপিং মলে বোঝাই শহরে হঠাৎই দমকা হাওয়ার মতো মন ভালো করা খবর। শহরে তৈরি হবে আস্ত জঙ্গল।
মূলত কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে কৃত্রিম পদ্ধতিতেই শুরু হয়েছে অরণ্য তৈরির কাজ। মহানগরের বুকে জঙ্গল তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে খিদিরপুরের ধোবিতলাও এবং তারাতলা। ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসেই শুরু হয়ে গিয়েছে কাজ। তিলোত্তমাকে 'সবুজ' করে তুলতে পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এক অসরকারি সংস্থা 'পাবলিক'। সংস্থার এক সদস্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "সাধারণত পার্ক বা বাড়িতে বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় গাছ লাগানো হয়েছে, এবং খুব কাছাকাছিই লাগানো হয়েছে, যাতে বন বীথি তৈরি হয়। অনেক দিন ধরেই কলকাতা বন্দরের সঙ্গে আলোচনা চলছিল, অবশেষে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। পরিবেশের জৈব বৈচিত্র যেন বজায় থাকে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ"। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই প্রকল্পের পাশে থাকছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন, বয়স ২০৭, তবু তার জন্মদিন উদযাপনে ভাটা পড়ে না একটি বারও
কলকাতা শহরে দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে দূষণ। প্রায়শই দূষণ মাত্রা পেছনে ফেলে দেয় রাজধানী শহর দিল্লিকে। এর কারণ হিসেবে পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই দায়ী করে আসছেন যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা, খাল বিল বুজিয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা রিয়েল এস্টেট শাসনকে। অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকতে থাকা শহর এমন অরণ্যায়নের খবরে একটু যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।
কলকাতা বন্দর সচিব শর্মিষ্ঠা প্রধান জানালেন, "খিদিরপুরের ধোবিতলাওতে একটা ঝিলও রয়েছে, তার পাশেই ১৭০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে 'মিনি ফরেস্ট'। আগামী বছরের মধ্যে ছোট খাট দুটো অরণ্য পাবে মহানগর, আশা করা হচ্ছে এমনটাই। পাশের ঝিলে প্রচুর পাখিও আসবে, ঘর বাঁধবে গাছে গাছে"।