Advertisment

জাগ্রত দেবী মঙ্গলময়ী, কোন টানে যেন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত

আয়তাকার গর্ভগৃহে দেবীর অধিষ্ঠান।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
TEMPLE

দেবীর ভৈরব কপিলেশ্বর।

গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে নদীর কাছাকাছিই মন্দির। চারপাশের পরিবেশটা বেশ শান্ত আর নিরিবিলি। ভক্তদের ভাষায়, রীতিমতো আধ্যাত্মিক পরিবেশ। এই এলাকায় জনবসতিও তেমন একটা নেই। সূর্য ঢলে পড়তে সন্ধ্যা নাগাদ দেবীর রাত্রিকালীন ভোগআরতি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। দেবী মঙ্গলচণ্ডী এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে অধিষ্ঠিতা।

Advertisment

দেবীর ৫১ পীঠের অন্যতম হল রাঢ়বাংলায় পূর্ব বর্ধমানের এই কোগ্রামের উজানী সতীপীঠ। বর্ধমান থেকে গুসকরা রোডে যেতে ডানদিকে কিছুদূর গিয়ে মাটির পথ ধরে এগোলেই দেবী উজানী সতীপীঠের মন্দির। পীঠনির্ণয় তন্ত্র অনুযায়ী, এখানে দেবীর ডান হাতের কনুই পড়েছিল। মতান্তরে, বলা হয় ডান নয়। দেবীর বাম হাতের কনুই এখানে পড়েছিল। দেবী এখানে মঙ্গলচণ্ডী রূপে পূজিতা হন। তাঁর ভৈরব কপিলাম্বর। অনেকে আবার এই ভৈরবকে ডাকেন কপিলেশ্বর বলে। এখানে ভৈরবের শিবলিঙ্গের সামনে নন্দীর কালো পাথরের একটি ছোট মূর্তি আছে। ভৈরবের বামদিকে রয়েছে একটি পদ্মাসনা বুদ্ধমূর্তি।

কথিত আছে, এই জায়গাতেই নাকি মঙ্গলচণ্ডীর ভক্ত শ্রীমন্ত সওদাগর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মঙ্গলকাব্য অনুযায়ী, দেবী মঙ্গলচণ্ডীর পুজো প্রচলন করতেই অভিশাপগ্রস্ত স্বর্গের অপ্সরা খুল্লনারূপে এই উজানী নগরে জন্মগ্রহণ করেন। খুল্লনাকে বিয়ে করেছিলেন ধনপতি সওদাগর। কিন্তু, পরম শিবভক্ত ধনপতি মানতে পারেননি মঙ্গলচণ্ডীর পুজো। বাণিজ্যে বের হওয়ার সময় তিনি স্ত্রীর কথা না-শুনে দেবী মঙ্গলচণ্ডীর ঘটে লাথি মেরে চলে গিয়েছিলেন। আর, তারপরই দেবীর ক্রোধে আর উজানীতে ফিরতে পারেননি।

খুল্লনার পুজোয় বহু বছর পর দেবী মঙ্গলচণ্ডী সন্তুষ্ট হন। দেবী মঙ্গলচণ্ডীর আশীর্বাদে ধনপতি সওদাগরও উজানীতে ফিরে আসেন। কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, উজানী সতীপীঠে দেবী মঙ্গলচণ্ডী কালীরূপ ধারণ করে ভক্তের কষ্ট লাঘব করেছিলেন। সেই থেকে এই সতীপীঠে শুরু হয়েছিল কালীপুজো। তবে, দেবী কালীর কোনও প্রতিমা এই সতীপীঠে নেই। এখানকার মন্দিরে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রতি মঙ্গলবার পুজো হয়। এছাড়াও ঘটা করে হয় দুর্গাপুজো, কালীপুজো। তবে, বাইরে থেকে এই পুজোর জন্য আলাদা করে কোনও মূর্তি আনা হয় না।

আরও পড়ুন- এগিয়ে থাকুন, শুধু দুর্গাপুজোই নয়, জানুন আগামী ৪ বছর মহালয়া থেকে কালীপুজোর দিন-ও

দেবীর ভোগের মধ্যে সারাবছরই থাকে অন্ন, ভাজা, ডাল, পায়েস। দুর্গাষ্টমীতে দেবীকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ। পৌষ সংক্রান্তিতে অজয় নদে উজানী পীঠের স্নানকে কেন্দ্র করে বহু ভক্তসমাগম হয়। বিরাট মেলা বসে। মূল মন্দিরে প্রবেশ করার মুখে রয়েছে বারান্দা। সেটা অতিক্রম করে প্রবেশ করতে হয় আয়তাকার গর্ভগৃহে। এই গর্ভগৃহে দেবী মঙ্গলচণ্ডীর ছোট কালো পাথরের দশভুজা মূর্তি আছে। আগে দেবীর বিগ্রহ ছিল অষ্টধাতুর। কিন্তু, তা চুরি হয়ে যায়। এরপর ছবিতেই চলত দেবীর আরাধনা। পরে, ১৯৯৪ সালে গ্রামের ধনী মল্লিক পরিবার কষ্টিপাথরের দশভুজা দেবীমূর্তিটি তৈরি করে দিয়েছে।

Kali Puja pujo Temple
Advertisment