গৌড়বঙ্গে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব দোল উৎসবের প্রচলন করেছিলেন। এই বিশেষ দিনে, অর্থাৎ ফাল্গুন পূর্ণিমা তিথির ফাল্গুনি নক্ষত্রে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। চৈতন্য ভক্তদের কাছে এই দিনটি তখন থেকেই এক বিশেষ উৎসব। তাঁর জন্মগ্রহণ উপলক্ষে শ্লোকে বলা হয়েছে, 'ফাল্গুন পূর্ণিমা তিথি নক্ষত্র ফাল্গুনি। শুভক্ষণে জন্মিলা গৌর দ্বিজমনি।।'
Advertisment
বাংলার বৈষ্ণব সমাজ চৈতন্য-কেন্দ্রিক। তাঁর জন্মের সময় থেকে শুরু হয় গৌরাব্দ। এবার যেমন ৫৩৭ গৌরাব্দ। চৈতন্য ভক্তরা মনে করেন, হাজারখানেক একাদশী ব্রত পালনে যে পুণ্য হয়, সেই পুণ্যলাভ হয় একটা পূর্ণিমা তিথি ব্রত পালন করলে। মঙ্গলবার তাই গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান।
যদিও শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান নিয়ে চৈতন্য ভক্তদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। বহু ভক্তই মনে করেন, মায়াপুর নয়। শ্রীচৈতন্যের জন্ম হয়েছিল নবদ্বীপ ধামে।
বিশ্বে বর্তমানে শ্রীচৈতন্যের অনুসারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ইসকন অগ্রগণ্য। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই বৈষ্ণব ভাবধারা প্রচারকারী সংগঠনের অসংখ্য ভক্ত। ইসকনের প্রধান কেন্দ্র মায়াপুর। সেখানকার মন্দিরেও মঙ্গলবার গৌরপূর্ণিমা উপলক্ষে বিগ্রহকে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। এরাজ্যে অন্যতম তীর্থক্ষেত্র বেলুড় মঠেও দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ছিল বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা। কীর্তন সহযোগে মঠ চত্বরে প্রদক্ষিণ করেন সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা।
শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্তবৃন্দ তথা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় অন্যতম তীর্থক্ষেত্র হল শ্রীক্ষেত্র বা পুরীধাম। এই পুরীধামেও সাড়ম্বরে দোলপূর্ণিমা পালিত হয়। পুরীতে এই পূর্ণিমাকে বলে, 'দোলা পূর্ণিমা'। এই উৎসবে ভগবান জগন্নাথকে 'দোলগোবিন্দ' নামে পুজো করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে সোনা ও রত্নখচিত বসনে সাজানো হয়।
এই বিশেষ দিনে ওড়িয়া ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। শ্রীমন্দির খুলে যায় কাকভোরে। সেখান থেকে পালকিতে চাপিয়ে দোলাবেদিতে স্থাপন করা হয় ভগবান দোলগোবিন্দ ও শ্রীদেবীকে। তাঁদের সামনে এই ক্যালেন্ডারের পুজো করা হয়।