চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের গুরু হয়ে ওঠার আগে চাণক্য ছিলেন তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার প্রতি তাঁর বরাবরই বিশেষ অনুরাগ ছিল। যে নীতিশাস্ত্র তিনি দেশের সনাতনী শিক্ষার ওপর নির্ভর করে লিখে গিয়েছেন, তাতেও সেই শিক্ষানুরাগ বারবার ধরা পড়েছে। আর, শিক্ষাক্ষেত্রে চাণক্যের প্রথম কথা, সন্তানের শিক্ষার জন্য মা-বাবাকেই সবার আগে উদ্যোগী হতে হবে। শুধু তাই নয়, সন্তান যাতে উপযুক্ত শিক্ষা পায়, তার ব্যবস্থা সবার আগে মা-বাবাকেই করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'মাতা শত্রুঃ, পিতা বৈরী, যাভ্যাং বালো ন পাঠিতঃ। ন শোভতে সভামধ্যে হংসমধ্যে বকো যথা।।' যার বাংলা অর্থ করলে হয়, মাতা ও পিতা সন্তানের কাছে শত্রু হয়ে ওঠেন। সেটা তখনই হয়, যখন তাঁরা সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হন। আর, অভিভাবকরা এই জন্য পরিতাপ করেন যে তাঁদের সন্তান সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। যেমনভাবে, হাঁসের দলের মধ্যে বক কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারে না, ঠিক তেমনই।
এই ব্যাপারে চাণক্য যা বলতে চেয়েছেন, আসলে তা হল- মা-বাবা সন্তানের জন্ম দেন। সুতরাং সন্তানকে সমাজে চলার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও মা-বাবার। জন্মের সময় শিশু থাকে কাদার পিণ্ডের মত। মা-বাবা তাঁকে যেমন ভাবে গড়বেন মনে করেন, সেভাবেই সে তৈরি হয়। তাই সুচরিত্রবান হওয়ার জন্য কঠোর অনুশাসন দরকার।
আরও পড়ুন- ঐতিহ্য এবং আস্থার মিশ্রণ, খিদিরপুরের ভূকৈলাস শিব মন্দির
তবে, একইসঙ্গে প্রত্যেক সন্তানের মা-বাবার স্নেহছায়ারও প্রয়োজন। সমাজে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রত্যেক মা-বাবার উচিত তাঁদের সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা। শৈশব হল তার উপযুক্ত সময়। শৈশবে উপযুক্ত শিক্ষা না-পেলে, সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে উঠতে পারে না। শিশুর পরবর্তী জীবন সুন্দর হয়ে গড়ে না-উঠলে সেই শিশু মা-বাবাকে তার জীবনের শত্রু হিসেবেই মনে করবে। ফলে, মা-বাবার জন্ম থেকেই শিশুর শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানার্জনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ, সেটি তাঁদের নৈতিক কর্তব্য।